ফেব্রুয়ারিতে এ বছর প্রথমবারের মতো সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকারুজ্জামান দেশের উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলেন। সে সময় তিনি রাজনৈতিক দলগুলোকে সতর্ক করেছিলেন, কাদা ছোড়াছুড়ি আর সহিংসতা চলতে থাকলে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়তে পারে।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তবুও নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে।
সেনাপ্রধান স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তিনি চান ২০২৬ সালে একটি নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর হোক এবং সেনারা আবার ব্যারাকে ফিরে যাক। এ লক্ষ্যেই তিনি রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান। তাঁর সে সময়কার বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছিল।
চার মাস পর এসে দেখা যাচ্ছে, তাঁর আশঙ্কাগুলো এখন বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। নির্বাচনের কাউন্টডাউন শুরু হওয়ার সাথে সাথেই দ্বন্দ্ব আরও তীব্র হয়েছে। জামায়াতে ইসলামি ঘোষণা দিয়েছে, তাদের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো নির্বাচন সম্ভব নয়। এনসিপি দাবি করেছে, ভোটের আগে বিচার বিভাগে সংস্কার আনতে হবে, নচেৎ জনগণ প্রক্রিয়াটি প্রত্যাখ্যান করবে। অন্যদিকে বিএনপি তার ফেব্রুয়ারির মধ্যেই নির্বাচন আয়োজনের দাবিতে অনড় অবস্থানে রয়েছে।
এসব অবস্থার কারণে রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বেড়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে সারা দেশে সেনা মোতায়েন রয়েছে। সেনাপ্রধান ঘোষণা দিয়েছেন, আসন্ন নির্বাচন পর্যন্ত এই মোতায়েন চলবে। এমনকি প্রায় ৮০০ সেনা সরাসরি নির্বাচনী মাঠে নামানো নিয়ে আলোচনাও চলছে।
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাসুদ কামাল মনে করেন, সেনাপ্রধানের সতর্কবার্তাকে অবহেলা করা উচিত নয়। তবে তাঁর মতে, এখনো পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছায়নি যে সার্বভৌমত্ব বাস্তবিক অর্থে ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
তিনি বলেন, “এ মুহূর্তে অভিযোগ-প্রতিআভিযোগ চলছে, কিন্তু একে কাদা ছোড়াছুড়ি বলা যাবে না। প্রতিটি দল শুধু তাদের রাজনৈতিক অবস্থান প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। আমার দৃষ্টিতে, দেশের সার্বভৌমত্বে এখনো কোনো প্রকৃত হুমকি তৈরি হয়নি।”

