নির্বাচনে অংশ নেবেন ড. ইউনূস?

মালয়েশিয়ায় সরকারি সফরে গিয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস পুনর্ব্যক্ত করেছেন যে, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোনো ইচ্ছা তার নেই। তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, সক্রিয় রাজনীতিতে প্রবেশ কিংবা প্রার্থী হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই তার নেই।

মালয়েশিয়ার জাতীয় সংবাদ সংস্থা বারনামাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী এই অর্থনীতিবিদ বলেন, “না, আমি এমন ব্যক্তি নই যার রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার কোনো সম্ভাবনা আছে।”

বারনামার প্রধান সম্পাদক আরুল রাজু দোরার রাজ, আন্তর্জাতিক সংবাদ বিভাগের প্রধান ভুন মিয়াও পিং এবং অর্থনৈতিক সংবাদ বিভাগের সহকারী সম্পাদক কিশো কুমারি সুসেদারামের সঙ্গে এক বিস্তৃত আলোচনায় ইউনুস বলেন, তার মূল মনোযোগ এখন অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার এজেন্ডা বাস্তবায়নে।

তিনি জানান, বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট তাকে অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেন। ওই সময়ের তরুণনেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতন ঘটে, যা তার ১৫ বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান ঘটায়।

ইউনূস বলেন, “আমরা এক বছরের মধ্যেই অনেক দূর এগিয়েছি। আগস্টে আমাদের প্রথম বছর শেষ হয়েছে, এবং আমরা অনেক কিছু অর্জন করেছি।” এই অগ্রগতির মধ্যে রয়েছে ঐক্যমত কমিশন গঠন, যা ১১টি সংস্কার কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে কাজ করছে।

তিনি জানান, চলতি মাসের শেষ নাগাদ কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত হবে, যা আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন ব্যবস্থার পথে বড় অগ্রগতি হবে।

সংবিধান ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ে ঐকমত্য গড়ে তোলাও কমিশনের দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে—যেমন সংসদ একক হবে নাকি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট। ইউনুস বলেন, ‘রাজনীতিতে এসব বিষয়ে ঐকমত্য প্রয়োজন। এ নিয়ে বড় বিতর্ক চলছে।’

তিনি আরও জানান, কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ চালিয়ে যাচ্ছে যাতে তাদের অবস্থান বোঝা যায় এবং উন্মুক্ত আলোচনাকে উৎসাহিত করা যায়।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দেশকে সঠিক পথে ফেরানো হয়েছে এবং আসন্ন ফেব্রুয়ারির নির্বাচন হবে বহু বছরের মধ্যে প্রথম বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন। শেখ হাসিনার সময় হওয়া গত তিনটি নির্বাচনে ভোট জালিয়াতি, বিতর্ক ও ভোটার দমনের অভিযোগ ছিল।

তিনি বলেন, “অনেক বছর পর এবার সত্যিকারের নির্বাচন হবে, কারণ অতীতের সব নির্বাচনই ছিল ভুয়া।”

তিনি আরও যোগ করেন, এবারকার নির্বাচন দীর্ঘদিন ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত লাখো মানুষের জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ১২ কোটি ৬১ লাখ নিবন্ধিত ভোটার রয়েছে, যার মধ্যে নতুন ভোটার প্রায় ৪৫ লাখ।

Scroll to Top