আদালত অবমাননার অভিযোগে পলাতক স্বৈরশাসক শেখ হাসিনাকে ৬ মাস এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ নেতা শাকিল আলম বুলবুলকে ২ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। বিচারপতি মো. গোলাম মূর্তজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ গত ২ জুলাই এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে বলা হয়েছে, দণ্ড কার্যকর হবে গ্রেপ্তার বা আত্মসমর্পণের দিন থেকে। সোমবার (১১ আগস্ট) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামীম সাংবাদিকদের কাছে রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি তুলে দেন।
পূর্ণাঙ্গ রায়ে শেখ হাসিনা ও বুলবুলের ফাঁস হওয়া অডিও কথোপকথন অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ওই কথোপকথনের এক পর্যায়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ওই সব তালিকা করো আর অফিসারদের বলো আমরা তালিকা পাঠাচ্ছি নেত্রীর কাছে। উনি চাইছেন, ভবিষ্যতে কাজে লাগবে।’
শেখ হাসিনার এই কথার পর বুলবুল বলেন, ‘জি নেত্রী, জি আসসালামু আলাইকুম।’ এরপর শেখ হাসিনা বলেন, ‘চাকরি সামনেও করতে হবে, এটা ভুলে যায় না যেন। এক মাঘে শীত যায় না।’
রায়ে এ অংশ উল্লেখ করে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা সরাসরি কারও নাম উল্লেখ না করলেও মামলার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা (প্রসিকিউটর, তদন্ত কর্মকর্তা, ট্রাইব্যুনালের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের) ভয়ঙ্কর পরিণতির হুমকি দিয়েছেন বলে ধারণা করা যায়।
বুলবুলের সঙ্গে আরেক পর্যায়ের কথোপকথন উল্লেখ করে রায়ে বলা হয়েছে,তিনি (শেখা হাসিনা) বলেছেন, ‘আমার তো সারা বাংলাদেশে ২২৭টি মার্ডার কেস। তোমরা তালিকা করো। ধরো অন্তত ২২৭ জনকে মারার লাইসেন্স পেয়ে গেছি। আর এক মামলার যে শাস্তি আর সোয়া ২০০ মামলায় সেই শাস্তি, তাই না? তো ঠিক আছে, সেই শাস্তি নেব কিন্তু তার আগে সোয়া ২০০ হিসাব করে নেব। এটা যেন মাথায় থাকে।’
পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা ২২৭ জনকে হত্যার দৃঢ়সংকল্প প্রকাশ করেছেন এবং এ জন্য বুলবুলকে তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন।
ফাঁস হওয়া কথোপকথনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটা কথা আমি বলি, তোমাদের কার বাড়ি পোড়াইছে কে?’ তখন বুলবুল বলেন, ‘ওই ওরাই নেত্রী, সবাই, জামাত-বিএনপি সকলেই।’ এরপর শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাদের বাড়িঘর নাই?’ বুলবুল বলেন, ‘আছে নেত্রী।’ হাসিনা বলেন, ‘তাদের ঘরবাড়ি নাই।’ বুলবুল বলেন, ‘জি, আছে।’ শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘তাহলে, সবকিছু কি প্রকাশ্যে করতে হয়?’ বুলবুল বলেন, ‘জি না, না নেত্রী, জি।’ এরপর শেখ হাসিনা, ‘আমাদের ঘরবাড়ি নাই, তাদেরও ঘরবাড়ি থাকবে না।’
রায়ে এ অংশ উল্লেখ করে বলা হয়েছে, এসব কথার মাধ্যমে শেখ হাসিনা প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক কর্মীদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিতে বুলবুলকে উসকে দিয়েছেন।



