খালেদা জিয়ার বাড়ি ঘেরাওয়ের নেতৃত্ব দেন যিনি, বেরিয়ে এলো গোপন তথ্য

সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে ‘জিয়াউর রহমান ফোবিয়ায়’ আক্রান্ত বলে বলা হতো। এই কারণে, উচ্চ আদালতে দায়িত্ব পালনের পুরো সময়জুড়ে তিনি বীর উত্তম জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে একের পর এক বিতর্কিত রায় দেন।

উচ্চ আদালতের আইনজীবী ও বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের মতে, আওয়ামী লীগের ক্যাডার হিসেবে পরিচিত এই বিতর্কিত বিচারপতি বেশিরভাগ মামলার শুনানিতে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান এবং দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে অপ্রাসঙ্গিক বিষোদ্গার ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করতেন, যা প্রায়ই বিতর্কের সৃষ্টি করত।

আইনজীবীরা অভিযোগ করেন, বিচারকের আসনে বসে শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক আসলে শেখ হাসিনার লাঠিয়াল বাহিনীর সদস্যের মতো কাজ করেছেন। তার বেশিরভাগ রায়ে আইন ও বিধিবিধানের চেয়ে শেখ হাসিনার ইচ্ছাকেই প্রাধান্য দেওয়া হতো। বিচারকের পদ থেকে অবসর নেওয়ার পরও তিনি জিয়া পরিবারকে নিয়ে কুৎসা, অপপ্রচার ও মিথ্যা অভিযোগ চালিয়ে গেছেন। বিভিন্ন সংগঠনের নামে ব্যক্তিগতভাবে অনুষ্ঠান আয়োজন করে জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়াকে প্রকাশ্যে আক্রমণ করেছেন। খালেদা জিয়ার গুলশান বাসভবন ঘেরাওয়ের কর্মসূচি পালন করে তিনি “কালা মানিক” উপাধি পান। জাতীয় সংসদ আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে “স্যাডিস্ট” আখ্যা দেয়, যা সংসদের কার্যবিবরণীতেও লিপিবদ্ধ রয়েছে।

২০১৫ সালের ২১ ডিসেম্বর ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বিএনপি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাণিজ্যের সমালোচনা করা হয়। সেখানে মুক্তিযুদ্ধে শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের বিভিন্ন কথিত দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড তুলে ধরা হয়। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে বিচারপতি মানিক, “ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি” (ঘাদানিক)-এর নেতৃত্বে বিএনপি চেয়ারপারসনকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান এবং তার গুলশান বাসভবন ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেন।

বিএনপি নেতারা বিচারপতি মানিককে আওয়ামী লীগের লাঠিয়াল বাহিনীর “সর্দার” বলে আখ্যায়িত করেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন,
“আমরা আগে শুনতাম ‘সাত রাজার ধন মানিক’, আর গত সাড়ে ১৫ বছরের শেখ হাসিনার দুঃশাসনে দেখলাম ‘এক রানির ধন মানিক’। এই মানিক শুধু আওয়ামী লীগের লাঠিয়ালই ছিলেন না, জাতীয় সংসদ কর্তৃক স্বীকৃত একজন স্যাডিস্টও ছিলেন। বিচারকের ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে বেআইনি কর্মকাণ্ড চালিয়ে গেছেন এবং জনরোষের পাত্র হয়েছেন। বিচার বিভাগ থেকে বিদায় নেওয়ার পরও নানা উপায়ে জিয়া পরিবারের ওপর প্রতিশোধ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। চেয়ারপারসনের গুলশান বাসভবন ঘেরাও তার নিকৃষ্টতম উদাহরণ। তবে তার ‘রানি’ হাসিনা পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিতে পারলেও, ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে মানিক সীমান্তে ভবঘুরে অবস্থায় জনতার হাতে ধরা পড়েন। তার প্রতিটি অপকর্মের আলাদা বিচার হওয়া জরুরি।”

Scroll to Top