বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টার উপস্থাপিত জুলাই ঘোষণাপত্র, ঘোষণার অনুষ্ঠান আয়োজন এবং মাত্র একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা—এই সবকিছু ইসলামপন্থিদের মতামত, ত্যাগ ও সাংগঠনিক ভূমিকার প্রতি এক সুস্পষ্ট অবজ্ঞার প্রকাশ। এটি শুধু দুঃখজনক নয়, বরং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, ঐতিহাসিক বাস্তবতা ও জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতি চরম অবহেলার শামিল।
বুধবার (৬ আগস্ট) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের সময় যারা রক্ত দিয়েছেন—আলেম-ওলামা, মাদ্রাসা শিক্ষক-ছাত্র, প্রবাসী এবং অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের ভূমিকা সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে। এমনকি ১৯৪৭ সালের আজাদী, ২০১৩ সালের শাপলা চত্বর গণহত্যা, পিলখানা ট্র্যাজেডির মতো ঐতিহাসিক ঘটনাগুলোরও কোনো উল্লেখ নেই। অথচ এ ঘটনাগুলো বাংলাদেশের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ অধ্যায়। এসব উপেক্ষা ইতিহাসের সঙ্গে চরম অবিচার।
মাওলানা মামুনুল হক আরও বলেন, গত দেড় দশক ধরে যারা ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন, জেল-জুলুম সহ্য করেছেন, জনগণকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছেন—এমন কোনো মূলধারার ইসলামী নেতাই গতকালের ঘোষণার মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন না। তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা বা পরামর্শও করা হয়নি। বরং নির্দিষ্ট একটি গোষ্ঠীর মতামতের ভিত্তিতেই পুরো বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা তার জাতির উদ্দেশে ভাষণে আগামী ফেব্রুয়ারিতে, অর্থাৎ আসন্ন রমজানের পূর্বে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের কথা বলেছেন। সময়সীমাটি যুক্তিসংগত মনে হলেও আমরা এই ঘোষণাকে স্বাগত জানাতে পারছি না। কারণ এটি কোনো জাতীয় সংলাপ বা সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে হয়নি, বরং একটি দলের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমেই এসেছে। এটি গণতন্ত্র নয়, বরং একটি নির্দিষ্ট দলের চাপের কাছে সরকারের অসহায় আত্মসমর্পণের বহিঃপ্রকাশ। ফলে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের অন্যতম প্রধান শর্ত ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত হওয়া নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।
তিনি আরও বলেন, অগণিত মানুষের রক্ত ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত জুলাই চেতনার বাস্তবায়ন এখন ভবিষ্যৎ সংসদের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এটি জুলাই অভ্যুত্থান থেকে উঠে আসা সংস্কারমূলক গণদাবির সঙ্গে এক নির্মম উপহাস। বিজয়ের মঞ্চে দাঁড়িয়ে প্রধান উপদেষ্টা সেই উপহাসই জাতির সঙ্গে করলেন।
মাওলানা মামুনুল হক বলেন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস বিশ্বাস করে, প্রকৃত সংস্কার, ফ্যাসিবাদের বিচার, জাতীয় ঐক্য এবং নির্বাচনের পূর্বে একটি সমতাভিত্তিক রাজনৈতিক পরিবেশ (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) ছাড়া কোনো অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, যদি জুলাই ঘোষণার পূর্বে ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা হতো, তাহলে একটি বাস্তবসম্মত, গ্রহণযোগ্য ও জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে রূপরেখা নির্ধারণ করা যেত। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তা হয়নি। আবারও জনগণকে প্রতারিত করা হয়েছে।
শেষে তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, নির্বাচনের পূর্বে সকল দলের অংশগ্রহণে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি অধ্যাদেশ জারি করে ‘জুলাই সনদ’ বা ‘জুলাই জাতীয় ঘোষণাপত্র’-কে আইনি ভিত্তি দিতে হবে এবং তাতে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনতে হবে। অন্যথায় এই ঘোষণাপত্র, নির্বাচন এবং পুরো অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগ জনগণের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে থাকবে।



