প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশে গেলে এমনভাবে তাকায় যে, লজ্জা লাগে।
সোমবার (৫ আগস্ট) ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত “জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস ২০২৫” শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
নিজ অভিজ্ঞতা তুলে ধরে ড. নজরুল বলেন, আপনাদের (কূটনীতিক) তো সমস্যা হয় না। আমার এত লজ্জা লাগে এত রাগ লাগে। আমার তো এখন একটা স্পেশাল পাসপোর্ট আছে। কিছু দিন পর আবার সবুজ পাসপোর্ট হবে। আমেরিকায় ছয়বার গিয়েছি। তারপরেও ভিসা দেয় না। দিনের পর দিন ঘুরায়ে ঘুরায়ে ভিসা দেয়। অনেক দেশ আপনার, এয়ারপোর্টে যাওয়ার পর এমনভাবে তাকায় মনে হয় মরে যাই। হংকং দুবাইয়ে পাসপোর্ট দেখছে। আর এমন একটা লুক দেয়। এত প্রশ্ন করে, পেছনে লোকজন ক্ষেপতে থাকে, মনে হয় মাটির সঙ্গে মিশে যাচ্ছি। কি দেশ বানিয়েছি আমরা যে, অন্য দেশ আমাদের নিচু চোখে দেখে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ড. আসিফ নজরুল বলেন, “তিনি কখনোই রাষ্ট্র পরিচালনার আসল রূপরেখা বোঝেননি। ভারতের কাছে বাংলাদেশের সরকার ও মন্ত্রীরা তার কারণে দাসে পরিণত হয়েছিল। তার পররাষ্ট্রনীতি বাংলাদেশকে লেজুড়বৃত্তির প্রতীক বানিয়েছে। লুটপাট, দমন-পীড়ন, গুম, হত্যা আর নির্যাতনের ভয়ঙ্কর কক্ষ বানিয়ে তিনি জনগণের সাথে নিষ্ঠুর উপহাস করেছেন।”
তিনি আরও বলেন, “হাসিনা এতটাই আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে মিথ্যা বলেন যে, এখন একটি মিথ্যাবাদী, প্রতারক প্রজন্ম গড়ে উঠেছে। তাকে নিয়ে মানসিক বা স্নায়ুবিষয়ক গবেষণা হওয়া উচিত।”
আইনি উপদেষ্টা হিসেবে ড. নজরুল আরও বলেন, “২০১৪ সালে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী ছাড়াই নির্বাচন হয়। ২০১৮ সালে ভোট হয় আগের রাতে। আর ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত হয় একটি পুতুলনাট্যিক ও প্রহসনমূলক নির্বাচন— যেখানে জনগণের ভোটাধিকার একেবারে কেড়ে নেওয়া হয়।”
তিনি বলেন, “বিশ্বের ইতিহাসে এমন ভূতের নির্বাচন আর দেখা যায়নি। ২০১৪ সালের নির্বাচন পরবর্তী সময়ে শেখ হাসিনার নির্দেশে শতাধিক মানুষকে হত্যা করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোকে পরিণত করা হয় মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের কেন্দ্রবিন্দুতে।”
জুলাই আন্দোলনের প্রসঙ্গে ড. নজরুল বলেন, “নিশ্চিত মৃত্যুর জেনেও ছাত্র-জনতা রাজপথে নেমে আসে। সর্বস্তরের মানুষ এক হয়ে ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থাকে উপড়ে ফেলতে রাস্তায় নামে।”
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থান আমাদের জাতীয় জীবনে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে এক ঐতিহাসিক ভূমিকা রেখেছে।”
তিনি আরও বলেন, “২০২৪ সালের গণআন্দোলন কেবল রাজনৈতিক পরিবর্তনের জন্য ছিল না— এটি ছিল ছাত্র, নাগরিক এবং সাধারণ মানুষের সাহস, দৃঢ়তা ও ঐক্যের অনন্য নিদর্শন।”
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম, পূর্ব এশিয়া বিষয়ক পররাষ্ট্র সচিব নজরুল ইসলাম এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন-রাজনৈতিক কূটনীতি বিভাগের মহাপরিচালক শাহ আসিফ রহমান।



