বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের বহিষ্কৃত নেতা আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ ঢাকার গুলশান থানায় দায়ের করা একটি চাঁদাবাজির মামলায় আদালতে দোষ স্বীকার করেছেন। গত রোববার (৩ আগস্ট) তিনি স্বেচ্ছায় ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সেফাতুল্লাহর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
রিয়াদ আদালতে জানান, তিনি এবং তার সহযোগী অপু মিলে চাঁদাবাজির মাধ্যমে আদায়কৃত ১০ লাখ টাকা সমানভাবে ভাগ করে নিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমি গরিব ঘরের ছেলে, টাকার লোভ সামলাতে পারিনি।” তিনি আরও জানান, ঘটনার দিন কারা সাবেক এমপির বাসায় গিয়েছিল এবং কী উদ্দেশ্যে গিয়েছিল, সে তথ্যও তিনি আদালতে দিয়েছেন।
রিয়াদ জানান, শুরুতে পুলিশ নিয়ে শাম্মী আহম্মেদকে ধরতে গেলেও তারা বাসায় তাকে পাননি। পরে পানি খাওয়ার অজুহাতে তিনি ও অপর আসামি জানে আলম অপু বাসায় প্রবেশ করেন। এরপর বাসার লোকজনকে ভয় দেখিয়ে ১০ লাখ টাকা আদায় করেন, যা তারা দুজনে মিলে ভাগ করে নেন। রিমান্ড শেষে রিয়াদসহ আরও তিন আসামিকে আদালতে হাজির করা হলে তিনি স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হন। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও গুলশান থানার পরিদর্শক মোখলেছুর রহমান আদালতের কাছে জবানবন্দি রেকর্ডের আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত অপুর জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
জবানবন্দিতে রিয়াদ দাবি করেন, তিনি অতীতে “ফ্যাসিবাদী লোকজন” গ্রেপ্তারে পুলিশকে সহায়তা করেছেন। তিনি জানান, গত ১৭ জুলাই রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সিনিয়র সহসভাপতি জাকির হোসেন মঞ্জু গুলশান বিভাগের ডিসির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে রিয়াদ ডিসিকে জানান, আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক এমপি শাম্মী আহম্মেদ গুলশানের নিজ বাসায় অবস্থান করছেন। ডিসি বিষয়টি গুলশান থানার ওসিকে জানান। এরপর রাত ২টার দিকে রিয়াদ, মঞ্জু, জানে আলম অপু, সাবাব হোসেন, আতিক শাহরিয়ার, সাদাকাউম সিয়াম, তানিম ওয়াহিদ ও আতিকসহ আরও কয়েকজন থানায় যান। তখন ওসি জানান, গভীর রাতে গুলশান সোসাইটিতে অভিযান চালানো যাবে না, ফজরের আজান পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
পরে গুলশান থানার একটি টিম রিয়াদের নেতৃত্বে অভিযানে যায়, যার নেতৃত্বে ছিলেন তদন্ত কর্মকর্তা নিজেই। তবে বাসায় শাম্মী আহম্মেদকে না পেয়ে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে তারা ফিরে আসেন। পরে অপু রিয়াদকে জানান, তিনি শাম্মী আহম্মেদের বাসা থেকে একটি এয়ারপড নিয়ে এসেছেন। পরে সকাল ১০টার দিকে রিয়াদ ও অপু ওই এয়ারপড ফেরত দিতে আবার শাম্মীর বাসায় যান। এয়ারপড ফেরত দেওয়ার পর অপু আবার পানি খাওয়ার কথা বলে বাসায় প্রবেশ করেন এবং শাম্মীর স্বামীকে বলেন, শাম্মী বাসায় আছেন এবং তারা তাকে পুলিশে দেবে। এতে শাম্মীর স্বামী ভয় পেয়ে টাকা দিতে রাজি হন। অপু তখন ৫০ লাখ টাকা দাবি করেন, কিন্তু স্বামী জানান, বাসায় এত টাকা নেই। পরে ১০ লাখ টাকা দিয়ে তাদের বিদায় করা হয় এবং তারা টাকাটি সমান ভাগে ভাগ করে নেন।
রিয়াদ আরও জানান, বাকি ৪০ লাখ টাকা নিতে ২৫ জুলাই তারা আবার শাম্মীর বাসায় যান। কিন্তু তখন পুলিশ গিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে। অপু পালিয়ে যান। পরে অপু নিজেও এই চাঁদাবাজির ঘটনায় নিজের দোষ স্বীকার করেন। জবানবন্দি শেষে আদালত রিয়াদকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এ ছাড়া রোববার আলোচিত এই মামলার আরও তিন আসামির রিমান্ড শেষে তাদের কারাগারে পাঠানোর আবেদন করা হয়। ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জিয়াদুর রহমানের আদালত সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। কারাগারে পাঠানো অন্য আসামিরা হলেন মো. ইব্রাহিম হোসেন, সাকাদাউন সিয়াম ও সাদমান সাদাব। তারাও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের সাবেক নেতা ছিলেন। চাঁদাবাজির ঘটনার পর তাদের সংগঠন থেকেও বহিষ্কার করা হয়।



