জরুরি এক সংবাদ সম্মেলনে ‘নতুন বাংলাদেশ’ গঠনের ইশতেহার পাঠের ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, “রোববার (৩ আগস্ট) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জুলাই পদযাত্রার আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি হবে এবং সেখানে এনসিপির পক্ষ থেকে নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার পাঠ করা হবে।”
শনিবার (২ আগস্ট) দলের অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই জরুরি সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
নাহিদ ইসলাম বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানের সময় শহীদ মিনার থেকে এক দফা দাবি উত্থাপন করা হয়েছিল—সরকার পতন এবং ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ। সেই এক দফার মধ্য দিয়েই আমরা ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান ও নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থার দাবি জানাই। আমরা আমাদের পদযাত্রার মাধ্যমে স্পষ্ট করেছি যে, ফ্যাসিবাদী সরকার হয়তো পতিত হয়েছে, কিন্তু ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা এখনো টিকে আছে। তাই নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তথা নতুন বাংলাদেশের নির্মাণের সংগ্রাম এখনো অব্যাহত রাখতে হচ্ছে। রোববার আমরা নতুন বাংলাদেশের জন্য আমাদের কর্মসূচি ও রাষ্ট্রচিন্তার রূপরেখা উন্মোচন করব।”
তিনি আরও বলেন, “অভ্যুত্থানের এক বছরপূর্তি উপলক্ষে আমরা ১ জুলাই থেকে ‘জুলাই পদযাত্রা’ নামে একটি কর্মসূচি শুরু করি। এ কর্মসূচির মাধ্যমে ৫৯টি জেলায় আমরা পদযাত্রা করেছি। আমরা প্রতিটি জায়গায় গিয়েছি, মানুষের কথা শুনেছি, অভ্যুত্থানে শহীদ হওয়া পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছি। আহত যোদ্ধা, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা গণমানুষের কাছাকাছি গিয়েছি, তাদের আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্ন শুনেছি, এবং নতুন একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে তাদের আমাদের প্রতি যে প্রত্যাশা, তা উপলব্ধি করেছি।”
নাহিদ বলেন, “এই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ কর্মসূচি ও নতুন বাংলাদেশের জন্য রূপরেখা তৈরি করেছি। শহীদ মিনারে আমরা সেই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও কর্মসূচি ঘোষণা করব। বিকেল ৪টায় শহীদ মিনারে এক জনসমাবেশের মাধ্যমে এই অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। আমরা ঢাকার সাধারণ জনগণকে এই সমাবেশে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণের আহ্বান জানাই।”
ইশতেহারে কী থাকবে—এমন প্রশ্নের উত্তরে নাহিদ বলেন, “আমরা তরুণদের জন্য পরিকল্পনা, দেশের অর্থনীতি, আইন-শৃঙ্খলা, পুলিশ এবং প্রশাসন বিষয়ে আমাদের পরিকল্পনা তুলে ধরব। বিগত এক বছরের সফলতা ও ব্যর্থতা নিয়েও কথা বলব। পাশাপাশি আমাদের পার্টির পক্ষ থেকে যেসব নীতিগত পরিকল্পনা রয়েছে, তা ইশতেহারের মাধ্যমে প্রকাশ করব।”
তিনি আরও বলেন, “গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে প্রথম জুলাই সনদের দাবি তোলা হয়। সে সময় আমরা সরকারের কাছে একটি খসড়া সনদ জমা দিই। অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোও তাদের নিজ নিজ খসড়া প্রস্তাব দেয়। সরকার এখন সবগুলো সমন্বয় করে একটি চূড়ান্ত সনদ তৈরি করছে। আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি, সনদের অবশ্যই সাংবিধানিক স্বীকৃতি থাকতে হবে। আমরা আশা করি, সরকার বিষয়টি নিশ্চিত করবে এবং সব রাজনৈতিক দল এই অবস্থানকে সমর্থন ও প্রতিশ্রুতি দেবে।”
আগামী ৫ আগস্ট বিকেল ৫টায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জাতির সামনে জুলাই ঘোষণাপত্র উপস্থাপন করতে যাচ্ছে। শনিবার দুপুরে এক ফেসবুক পোস্টে এ তথ্য জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে নাহিদ বলেন, “আমরা জেনেছি, আগামী ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সব রাজনৈতিক শক্তি ও দলগুলোর সমন্বয়ে সরকার জুলাই ঘোষণাপত্র উপস্থাপন করতে যাচ্ছে। আমরা সরকারের এই উদ্যোগকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাই। একই সঙ্গে আমরা পুনরায় দাবি জানাচ্ছি—৫ আগস্টের মধ্যেই জুলাই সনদের বিষয়টি সুরাহা করতে হবে।”



