যশোরের শিল্পনগরী নওয়াপাড়ায় এক ব্যবসায়ীকে বালিতে পুঁতে রেখে ভয়ভীতি ও নির্যাতনের মাধ্যমে ৪ কোটি টাকা চাঁদা আদায়ের অভিযোগে জেলাজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। প্রায় এক বছর আগে ঘটলেও সম্প্রতি এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী শাহনেওয়াজ কবীর টিপুর স্ত্রী মোছা. আসমা খাতুন অভয়নগর থানা ও আর্মি ক্যাম্পে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগে নাম উল্লেখ করা হয়েছে নওয়াপাড়া পৌর বিএনপির সদ্য বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান জনি এবং নওয়াপাড়া প্রেসক্লাবের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মফিজ উদ্দিনের।
অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আলিম অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। জানা গেছে, ব্যবসায়ী শাহনেওয়াজ কবীর টিপু নওয়াপাড়ার ‘জাফ্রিদী এন্টারপ্রাইজ’-এর মালিক।
আসমা খাতুন জানান, ২০২৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টার দিকে সৈকত হোসেন হিরা নামের এক ব্যক্তি কৌশলে তার স্বামী টিপুকে আসাদুজ্জামান জনির অফিসে নিয়ে যান। সেখানে নিয়ে গিয়ে জনি টিপুকে মারধর করেন এবং অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ২ কোটি টাকা দাবি করেন। পরে আসমা খাতুন সাউথ বাংলা ব্যাংক থেকে জনির প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে ২ কোটি টাকা রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট (RTGS) করেন। টাকাটি পাওয়ার পর ওই দিনই টিপুকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এরপর একই মাসের ১৮ তারিখ সকাল ৯টার দিকে টিপু গ্রামের বাড়ি চলিশিয়া থেকে মোটরসাইকেলে করে বাজারে যাচ্ছিলেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গেট পার হওয়ার পর সৈকত হোসেন হিরা তার পথরোধ করেন। দুপুর ৩টা পর্যন্ত টিপুর মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে জানা যায়, টিপুকে কৌশলে নেওয়া হয়েছে কনা ইকো পার্কে।
সেখানে গেলে টিপুর স্ত্রী দেখতে পান, আসাদুজ্জামান জনি, সম্রাট হোসেন এবং সাংবাদিক মফিজ উদ্দিন আবারও টিপুকে অস্ত্র ঠেকিয়ে মারধর করছেন। এরপর বুক পর্যন্ত মাটি খুঁড়ে বালিতে পুঁতে আরও ২ কোটি টাকা দাবি করা হয়। বাধ্য হয়ে টিপু তার ম্যানেজারকে ফোন করে টাকা পাঠাতে বলেন।
পরে টিপুর ম্যানেজার সাংবাদিক মফিজ উদ্দিনের একাউন্টে পূবালী ব্যাংক থেকে ৬৮ লাখ এবং সাউথ বাংলা ব্যাংক থেকে ৩২ লাখ টাকা RTGS এর মাধ্যমে পাঠান। সেই সঙ্গে মফিজ উদ্দিন ১ কোটি টাকার একটি চেক আদায় করেন এবং জনি ও দিলীপ সাহার নামে ৬টি ১০০ টাকার ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নেন। ঘটনা ফাঁস করলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে টিপুকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
২০২৩ সালের এই ঘটনার প্রেক্ষিতে চলতি বছরের ৩০ জুলাই অভয়নগর থানায় এবং ৩১ জুলাই আর্মি ক্যাম্পে লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর স্ত্রী আসমা খাতুন। অভিযোগের খবর ছড়িয়ে পড়তেই যশোর জেলাজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে আসাদুজ্জামান জনি ও মফিজ উদ্দিনের মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে।
তাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি, কারণ ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
এ বিষয়ে যশোর জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, “সংগঠনবিরোধী কার্যকলাপের কারণে জনিকে আগেই বহিষ্কার করা হয়েছে। সে এখন আর আমাদের কেউ নয়। ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টাকা আদায়ের বিষয়ে আমাদের কোনো তথ্য নেই। দলের পক্ষ থেকে তার কর্মকাণ্ডের দায় নেওয়া হবে না।”
অভয়নগর থানার ওসি আব্দুল আলিম বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত করে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”



