‘দলীয় প্রধানকে বাদ দেওয়া অগণতান্ত্রিক’, ‘কমিশনের প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের বিরুদ্ধেও দাঁড়ায়’: বিএনপি

যাদের আমরা বিএনপির নির্বাচনী প্রতীক ‘ধানের শীষ’-এ মনোনয়ন দেব, তারা সবাই দলীয় প্রধানের নেতৃত্ব মেনেই নির্বাচনে অংশ নেবেন। সুতরাং দলীয় প্রধান প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না—এ ধরনের ‘অযৌক্তিক’ প্রস্তাব গ্রহণ করার প্রশ্নই ওঠে না।

প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা এবং দলীয় প্রধান একই ব্যক্তি হবেন কি না—এই বিষয়টি সাম্প্রতিক সময়ে ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে অন্যতম আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে। বিএনপি, এলডিপি, লেবার পার্টি, এনডিএম, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট এবং আম জনতার দল এ বিষয়ে ভিন্নমত প্রকাশ করেছে। তাদের মতে, একজন ব্যক্তি একইসঙ্গে দলীয় প্রধান, প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা হতে পারেন। অপরদিকে জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি ও আরও কিছু দল দলীয় প্রধানকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার অনুমতি দেওয়ার বিরোধিতা করেছে।

এই প্রেক্ষাপটে গতকাল ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত ঐকমত্য কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় পর্যায়ের সংলাপের ১৭তম দিনে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ ঘোষণা দেন যে, রাজনৈতিক দলের প্রধান ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। তবে এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে যারা একমত নন, তারা জাতীয় সনদে ‘ভিন্নমতের নোট’ (Note of Dissent) দিতে পারবেন।

সংলাপে অংশ নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা একই ব্যক্তি হবেন—এ বিষয়ে অধিকাংশ দলই একমত, তবে দলীয় প্রধান হওয়া নিয়ে কিছু দলের আপত্তি রয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা আগেই বলেছি, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে যেমন ভিন্নমতের সুযোগ রাখা হয়েছে, তেমনি এখানেও ভিন্নমতের সুযোগ থাকা উচিত। আমাদের অবস্থান স্পষ্ট—যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের মতো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কোথাও এমন কোনো বিধান নেই, যা দলীয় প্রধানকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করে। এটি একটি গণতান্ত্রিক অধিকার। সংসদ সদস্যরা যাকে চাইবেন, তিনিই হবেন প্রধানমন্ত্রী। দলীয় প্রধান প্রধানমন্ত্রী হবেন এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই, আবার তাকে প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে বাদ দেওয়ারও কোনো যৌক্তিকতা নেই।”

স্থায়ী কমিটির গত বৈঠকের মতো এবারের বৈঠকেও রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিএনপি কিছু ভারসাম্য আনার বিষয়ে আগ্রহী, তবে এমন কোনো ব্যবস্থা সমর্থন করে না, যেখানে প্রধানমন্ত্রী বা সরকারপ্রধানের হাতে পর্যাপ্ত নির্বাহী ক্ষমতা থাকবে না। স্থায়ী কমিটির মতে, সংসদীয় গণতন্ত্রে দেশ পরিচালনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হাতে পর্যাপ্ত ক্ষমতা থাকা জরুরি। বিএনপি নেতারা অভিমত দেন, রাষ্ট্রপতির স্বাধীন সিদ্ধান্ত গ্রহণের মতো দু-একটি ক্ষেত্রে কিছু বাড়তি ক্ষমতা দেওয়া যেতে পারে। তবে রাষ্ট্রপতিকে অতিরিক্ত ক্ষমতায়িত করা হলে সংসদীয় গণতন্ত্র কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়বে। সে ক্ষেত্রে সংসদের প্রয়োজনীয়তাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রীর হাতে যথেষ্ট ক্ষমতা না থাকলে সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা টিকবে না। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। ভবিষ্যতে আরও আলোচনা হবে।

এদিকে, সোমবারের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভেতরে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে প্রাণহানির মর্মান্তিক ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করা হয়। সভায় শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। নিহত শিক্ষার্থী ও পাইলটের আত্মার মাগফিরাত, আহতদের দ্রুত আরোগ্য এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানানো হয়।

Scroll to Top