‘গোপালগঞ্জ থেকে এপিসিতে ওঠানোর দায় আমিসহ কয়েকজনের’: তুহিন

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় নেতাদের গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। হামলার সময় পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ হয়ে ওঠে যে সেনাবাহিনীর আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার (এপিসি) ব্যবহার করে এনসিপির শীর্ষ নেতাদের সরিয়ে নিতে হয়। এ ঘটনায় দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়।

বিষয়টি নিয়ে বুধবার (১৬ জুলাই) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আরিফুর রহমান তুহিন। ‘গোপালগঞ্জ থেকে এপিসিতে ওঠানোর দায় আমিসহ কয়েকজনের’ শিরোনামে একটি পোস্টে তিনি ঘটনার পেছনের বাস্তবতা তুলে ধরেন।

তুহিন জানান, হামলার সময় গুলি ও ককটেলের আওতায় পড়ে গোটা এলাকা আতঙ্কিত হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনী এসে জানায়, তারা সবাইকে পর্যায়ক্রমে এপিসিতে তুলে নিয়ে যাবে—এটাই তাদের নির্দেশ। তবে এনসিপি নেতারা প্রথমে এর বিরোধিতা করে সবাই একসঙ্গে গাড়িতে যাওয়ার পক্ষে মত দেন। এরপর প্রায় আধা ঘণ্টার আলোচনার পর পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় শীর্ষ নেতাদের অন্তত এপিসিতে করে সরিয়ে নেওয়া হবে।

তুহিন জানান, সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কর্নেল ও সামরিক কর্মকর্তারা স্পষ্টভাবে বলেন, এসব শীর্ষ নেতা জাতীয় সম্পদ হিসেবে বিবেচিত, তাই তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এপিসির সিদ্ধান্ত। তিনি আরও বলেন, অনেক অনুরোধ ও অনমনীয় অবস্থানের পর অবশেষে জোর করেই নেতাদের এপিসিতে ওঠানো হয়। এর মধ্যেও তারা একাধিকবার নিচে নেমে আসেন, তখন আবার ধস্তাধস্তি করে তোলেন তাদের।

এ সময় হামলাকারীরা নাহিদ ইসলামের গাড়িটিকে লক্ষ্য করে ককটেল ও গুলি ছোঁড়ে এবং ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে বহরের কয়েকটি গাড়ির জানালা ভেঙে যায় এবং অনেকেই আহত হন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরও আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। পরে গোপালগঞ্জ শহর পার হওয়ার পর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে নেতারা নিজ নিজ গাড়িতে উঠে পড়েন।

আরিফুর রহমান তুহিন দাবি করেন, গুলির আঘাতে বহরের একটি গাড়ির চাকা পাংচার হয়ে যায় এবং দুটি গাড়ি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও তিনি প্রশ্ন তোলেন, বলেন, “তারা শুরুতেই হয়তো চাইছিল হাসনাতরা মরে যাক।”

তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, “অনেকেই হাসিনার হামলার বিষয়টি আড়াল করে এপিসিতে ওঠার বিষয়কে বিতর্কিত করছেন। অথচ আমরা কয়েক হাজার অস্ত্রধারীর সামনে ৪ ঘণ্টা টিকে ছিলাম, সেটি কেউ দেখছেন না।”

তুহিন আরও বলেন, “আমাদের নেতারা উন্নতমানের গাড়িতে কিংবা দুই ডজন নিরাপত্তা সদস্য নিয়ে চলাফেরা করেন না। হাইস কিংবা নোয়াহর মতো সাধারণ গাড়িতে চলাফেরা করেন, যেখানে একটু ইট পড়লেই কাচ ভেঙে যায়। তবু তাদের জীবন বাঁচাতে আমরা যা করা দরকার ছিল তা করেছি।”

তিনি বলেন, “সন্ত্রাসীদের মূল লক্ষ্য ছিল নাহিদ, আখতার ও হাসনাত। এটা বুঝতে বেশি কষ্ট হয় না। কাজেই আমরা দায়িত্ব পালনে পিছপা হইনি।”
শেষে তিনি মন্তব্য করেন, “আপনারা যদি শুধু এপিসির বিষয় নিয়েই পড়ে থাকেন, তাহলে হয়তো সবাই সেদিন ওখানেই শেষ হয়ে যেতাম।”

Scroll to Top