রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা বাড়ছে। মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে নৃশংসভাবে লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ হত্যার ঘটনার পর ছাত্রদল একাধিক কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। তাদের দাবি, ‘মব কালচারের’ নামে দেশজুড়ে পরিকল্পিতভাবে অস্থিতিশীলতা তৈরির অপচেষ্টা চলছে। এমন প্রেক্ষাপটে ছাত্রদলের শীর্ষ নেতারা সরব হয়েছেন। তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ধৈর্য্য ধরছে ছাত্রদল, কিন্তু সহনশীলতা ভাঙলে দেশজুড়ে প্রতিবাদ শুরু হবে। এর দায় নিতে হবে জামায়াত-শিবিরসহ সংশ্লিষ্ট গোপনচক্রকে।
সোমবার (১৫ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৩টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। ‘মব সৃষ্টির অপচেষ্টা’ ও ‘শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার পরিবেশ নষ্টের’ প্রতিবাদে আয়োজিত এ কর্মসূচি শেষে শাহবাগ মোড়ে গিয়ে মিছিলটি শেষ হয়। একই দিন ঢাকার বাইরে দেশের বিভিন্ন বিভাগ, জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় শহরেও ছাত্রদল নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন।
বিক্ষোভ শুরুর আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, “ছাত্রদলের লাখো নেতাকর্মীকে আমরা শান্ত রেখেছি। বিএনপির শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে অশালীন ও উস্কানিমূলক স্লোগান দেওয়া হয়েছে, তবু আমরা প্রতিক্রিয়া দেখাইনি। কারণ আমরা দেশে অস্থিতিশীলতা চাই না।”
তিনি আরও বলেন, “ছাত্রদল আজ দেশের প্রতিটি ক্যাম্পাসে সহনশীলতার রাজনীতি উপহার দিচ্ছে। কিন্তু প্রতিনিয়ত পরিকল্পিতভাবে ‘মব’ সৃষ্টি করা হলে, আমরা আর নীরব থাকব না। গোটা দেশের রাজপথে তখন প্রতিবাদ গর্জে উঠবে। আর যদি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়, তাহলে তার দায়ভার বহন করতে হবে জামায়াত-শিবিরকে।”
রাকিব বলেন, “আজ যারা ক্যাম্পাসে মব সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে, তারা ‘ক্যাম্পাস ক্রস’ ইস্যু করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করছে। এদের পেছনে একটি গুপ্ত সংগঠন সক্রিয় রয়েছে, যারা পরিকল্পিতভাবে ছাত্রদলের ভাবমূর্তি নষ্টের অপচেষ্টা করছে।”
তিনি অভিযোগ করেন, “মিটফোর্ড হত্যার ঘটনায় ছাত্রশিবির যেভাবে তৎপর হয়ে উঠেছে, ঠিক তেমনভাবে সাম্য ও পারভেজ হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে কোনো কর্মসূচি তারা দেয়নি। এটি স্পষ্ট করে দেয়, তারা একাত্তরের মতোই আজও গোপন রাজনীতির পথে রয়েছে।”
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, “যারা নিজেদের সাধারণ শিক্ষার্থী দাবি করে আন্দোলন করছে, তারা আসলে জামায়াত-শিবিরের ছত্রচ্ছায়ায় কাজ করছে। তারা ছাত্রদলের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করতে চায়। আমাদের শান্তিপূর্ণ অবস্থানকে দুর্বলতা ভাবা ঠিক নয়।”
তিনি আরও বলেন, “ছাত্রদলের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাতে গিয়ে একটি পক্ষ শিক্ষাঙ্গনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। দেশের গণতান্ত্রিক ছাত্র আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে তারা সক্রিয়।”
দুপুর থেকেই নয়াপল্টনে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মহানগর এবং বিভিন্ন কলেজ ও ইউনিটের কয়েক হাজার নেতাকর্মী জড়ো হতে থাকেন। তাদের হাতে ছিল দলীয় ব্যানার-ফেস্টুন এবং মাথায় জাতীয় পতাকা ও দলীয় টুপি।
ছাত্রদল নেতাকর্মীদের মুখে মুখরিত হয় নানা স্লোগানে:
“জামায়াত-শিবির রাজাকার, এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়”
“জিয়াউর রহমানের বাংলায়, রাজাকারের ঠাঁই নাই”
“রাজাকার আর স্বৈরাচার, মিলেমিশে একাকার”
“পিন্ডি যাবে রাজাকার, দিল্লি গেছে স্বৈরাচার”
সাড়ে তিনটার দিকে মিছিলটি নয়াপল্টন থেকে শুরু হয়ে কাকরাইল, মৎস্য ভবন, জাতীয় প্রেসক্লাব, কার্জন হল, টিএসসি হয়ে শাহবাগে গিয়ে শেষ হয়। প্রায় ৫টায় শাহবাগ মোড়ে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা অবস্থান নিলে পুরো মোড়টি যান চলাচলের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। এতে আশপাশ এলাকার রাস্তায় তীব্র যানজট তৈরি হয় এবং যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়।
ঘণ্টাব্যাপী অবস্থান ও সংক্ষিপ্ত সমাবেশের পর সন্ধ্যা ৬টার দিকে ছাত্রদল নেতারা কর্মসূচি সমাপ্তির ঘোষণা দেন। এরপর শাহবাগ মোড় ছেড়ে দিলে ধীরে ধীরে যান চলাচল স্বাভাবিক হতে থাকে।
ছাত্রদল একদিকে যেমন সহনশীলতার বার্তা দিচ্ছে, অন্যদিকে হুঁশিয়ারি দিচ্ছে— বারবার আঘাত আসলে তা প্রতিরোধ করা হবে রাজপথে। মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষিতে তারা যে বার্তা দিয়েছে, তা রাজনীতির মাঠে নতুন উত্তেজনার ইঙ্গিত দিচ্ছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।



