ভারতও বুঝে গেছে, শেখ হাসিনার সময় শেষ

বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই রাজনৈতিক মাঠে গুজব, জল্পনা ও নানা ধরনের প্রচারণার জোয়ার উঠেছে। তবে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে আন্তর্জাতিক, বিশেষ করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে। যেসব টেলিভিশন চ্যানেল এতদিন শেখ হাসিনার সরকারকে সর্বতোভাবে সমর্থন দিয়ে এসেছে, তারা এখন হঠাৎ করেই ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

যেমন—জি২৪ ঘন্টা, যা একসময় আওয়ামী লীগের মিডিয়া প্রতিনিধি হিসেবেই বিবেচিত হতো, এখন শিরোনাম করছে:“ইউনূস আনলেন ৯ হাজার কোটি টাকার বিদেশি বিনিয়োগ”, “চীনের ১০০+ সংস্থার আগ্রহ”, “এন্ড অফ হাসিনা ইরা”

এই মোড় ঘোরানোর পেছনে কোনো নৈতিক জাগরণ নয়, বরং বিশ্লেষকরা বলছেন, এটা হলো বাস্তবতাকে মেনে নেওয়ার কৌশলী প্রয়াস। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা, ও ২০০-র বেশি হত্যার অভিযোগের প্রেক্ষাপটে তার পক্ষে অবস্থান নেওয়াটা অনেক আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক প্ল্যাটফর্মের জন্য রাজনৈতিক বোঝায় পরিণত হয়েছে।

রিপাবলিক বাংলা, যেটি এক সময় ‘প্রচারণা যন্ত্র’ হিসেবে পরিচিত ছিল, এখন ড. ইউনূসের কূটনৈতিক বিচক্ষণতা ও আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতার প্রশংসা করছে। তারা বলছে—ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সঙ্গে ড. ইউনূসের নেতৃত্বের সম্মিলনই বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন বাস্তবতা তৈরি করেছে।

এমনকি আওয়ামী লীগের এক নেতার প্রকাশ্য হুমকি ও ড. ইউনূসকে ‘টার্গেট’ করার ভিডিও যখন সামনে আসে, তখন জি২৪ চ্যানেল সেটিকে “সন্ত্রাসী মানসিকতার প্রকাশ” বলে ব্যাখ্যা করে। যা আগে কল্পনাও করা যেত না।

কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়—এই হঠাৎ প্রশংসা কী সত্যিই চিন্তার জাগরণ? নাকি এগুলোও এক নতুন কূটনৈতিক হিসাব?

সমালোচকদের মতে, ভারত এখন নিশ্চিত—শেখ হাসিনার রাজনীতির শেষ অধ্যায় শুরু হয়ে গেছে। ফলে তারা নতুন শাসনব্যবস্থার সঙ্গে আগেভাগেই নিজেদের অবস্থান মেলাতে চাইছে। ঠিক যেমন—বৃষ্টির আগে পাখিরা নিরাপদ আশ্রয় খোঁজে।

দৃশ্যপট বদলেছে, চরিত্র বদলেছে। যে মিডিয়াগুলো এক সময় গুণকীর্তন করত, তারাই এখন বিদায়ের সুর তুলছে। তবে এই নাটকের শেষ দৃশ্য কেমন হবে, সেটিই এখনো বড় প্রশ্ন।

Scroll to Top