ছাত্র-জনতার রক্ত ও আত্মত্যাগে অর্জিত জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের স্মৃতিকে অম্লান রাখতে দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনকে রূপান্তর করা হচ্ছে “জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘরে”। কাজ প্রায় শেষের পথে, চলছে জাদুঘরের জন্য স্মারক সংগ্রহের চূড়ান্ত প্রস্তুতি। আগামী ৫ আগস্ট এটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
জাদুঘরটিতে থাকবে ঐতিহাসিক আন্দোলনের স্থিরচিত্র, শহীদদের ব্যবহৃত পোশাক, চিঠিপত্র, গুরুত্বপূর্ণ দলিল, পত্রিকার কাটিং, ভিডিও-অডিও ফুটেজসহ নানা স্মৃতিস্মারক। উল্লেখযোগ্যভাবে, সেখানে আলাদাভাবে প্রদর্শিত হবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্য, যা ওই সময়ের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের অংশ হিসেবে সংরক্ষিত থাকবে। এ জাদুঘরটি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের অধীনেই পরিচালিত হবে।
জাতীয় জাদুঘরের সচিব মো. সাদেকুল ইসলাম জানান, বিষয়টি সরাসরি মন্ত্রণালয় তত্ত্বাবধান করছে বলে তিনি মন্তব্য করতে অপারগ। তবে তিনি নিশ্চিত করেন, ৫ আগস্ট জাদুঘরের উদ্বোধনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি চলছে এবং প্রধান উপদেষ্টা নিজে উদ্বোধন করবেন।
সূত্র জানায়, জাদুঘরের জন্য দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে স্মারক সংগ্রহে কাজ করছে আর্কাইভ ও কালেকশন টিম। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছে যাতে সাধারণ মানুষও ঐতিহাসিক স্মৃতিচিহ্ন সংগ্রহে অংশ নিতে পারেন। লক্ষ্য, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে সংঘটিত অভ্যুত্থান ও ত্যাগের ইতিহাস তুলে ধরা।
তথ্যানুসন্ধানে আরও জানা গেছে, রাজধানীর মিরপুর রোড সংলগ্ন প্রাচীনতম ও গুরুত্বপূর্ণ স্থান গণভবন—যেটি একসময় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হতো—সেটিকেই জাদুঘরে রূপান্তর করা হচ্ছে। ২০২৩ সালের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হওয়ার পর ‘জাতির পিতার পরিবার-সদস্যগণের নিরাপত্তা আইন, ২০০৯’ বাতিল করা হয়, ফলে শেখ হাসিনার পরিবার আর গণভবনে থাকার আইনি অধিকার রাখেনি। এরপরই ছাত্র প্রতিনিধিদের প্রস্তাবে ৫ সেপ্টেম্বর সরকারিভাবে সিদ্ধান্ত হয় গণভবনকে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ হিসেবে ব্যবহারের। ২ নভেম্বর এ উদ্দেশ্যে একটি কমিটিও গঠন করা হয়।
সরেজমিন দেখা যায়, গণভবনের সীমানা প্রাচীর কিছুটা সংস্কার করা হয়েছে, আবার অনেক জায়গা পূর্বের অবস্থায় রাখা হয়েছে। ৫ আগস্ট আন্দোলনের সময় গণভবনের ভাঙচুরের চিহ্নগুলোকে ইচ্ছাকৃতভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে, যাতে ভবিষ্যৎ দর্শনার্থীরা ওই সময়কার আবেগ ও ঘটনার সঙ্গে সংযোগ অনুভব করতে পারেন।
গণপূর্ত অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১৭.৬৮ একর বা ৫৩ বিঘা জায়গাজুড়ে বিস্তৃত এ ভবনটিতে রয়েছে দুতলা একটি প্রধান ভবন, কয়েকটি একতলা ভবন ও কর্মচারীদের জন্য সেমিপাকা কাঠামো। ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে এটি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের হাতে হস্তান্তর করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর এই প্রকল্পের সার্বিক তত্ত্বাবধান করছে।
কর্তৃপক্ষের মতে, গণভবন প্রাঙ্গণটি এখনো রাজধানীর বুকে এক টুকরো সবুজ প্রাকৃতিক পরিবেশ। এখানে রয়েছে খেত, পুকুর, লন এবং নানা প্রজাতির ফলের গাছ। জুলাই স্মৃতি জাদুঘর শুধু ইতিহাস সংরক্ষণের স্থানই নয়, নগরবাসীর জন্য একটি মনোরম ও শিক্ষণীয় বিনোদনকেন্দ্র হয়ে উঠবে বলেও আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।