সাবেক সংসদ সদস্য ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক গোলাম মাওলা রনি দাবি করেছেন, ভারতের দিল্লি ও কলকাতার বিভিন্ন প্রচারমাধ্যম পরিকল্পিতভাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অপদস্থ ও দুর্বল করার অপপ্রচারে লিপ্ত। তিনি বলেন, এই অপপ্রচারে ড. ইউনূস যেন একা হয়ে পড়েছেন, তার পক্ষে কেবল হাতে গোনা কয়েকজন ইউটিউবার ছাড়া আর কেউ মুখ খুলছে না।
বৃহস্পতিবার নিজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত বিশ্লেষণধর্মী একটি ভিডিওতে গোলাম মাওলা রনি বলেন, ‘দিল্লি ও কলকাতার প্রচারমাধ্যম অনবরত তাকে বরখাস্ত করছে, ছুটি দিচ্ছে, তার বিদায়ের ঘণ্টা বাজাচ্ছে, তার জায়গায় শেখ হাসিনাকে বসাচ্ছে; আর নিত্যনতুন মিথ্যা কথা বলে বেড়াচ্ছে।
বাস্তবতা হলো—তাদের এই মিথ্যা কথা, যুক্তি ও উপস্থাপনা অনেকেই বিশ্বাস করছে। এতে মানুষের মধ্যে সন্দেহ তৈরি করছে। যা রাষ্ট্রের অগ্রযাত্রার জন্য বিরাট হুমকি।’
বৃহস্পতিবার ‘ইউনূস সরকারের ছুটির ঘণ্টা! কলকাতা-দিল্লি থেকে সমানে বাজছে! আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন!’ শিরোনামে নিজের ইউটিউব চ্যানেলে দেওয়া এক বিশ্লেষণে এসব কথা বলেন তিনি।
সাবেক এ সংসদ সদস্য আরো বলেন, ড. ইউনূসের সরকার কতদিন ক্ষমতায় থাকতে চায়? সামনে যে নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে সরকার কি আসলেই আন্তরিকভাবে সেই নির্বাচন দিতে চাচ্ছে? ড. ইউনূস তার মদদে যেসব দল তৈরি করেছেন (এনসিপিসহ ৫০ থেকে ৬০টি); যাদেরকে বলা হয় কিংস পার্টি; কিংস পার্টির ফাদার হিসেবে তিনি বড় বড় ৩ থেকে ৪টি দল তৈরি করেছেন। তারা বিএনপি বা আওয়ামী লীগের মতো এতবড় দল নয়; কিন্তু সারা দেশে তাদের রাজনৈতিক তৎপরতা ও অর্থনৈতিক সক্ষমতা আছে। কয়েকটি অভিজ্ঞ ও পুরনো দল এসব কিংস পার্টিকে ডানে থেকে বামে থেকে সাপোর্ট দিচ্ছে। ড. ইউনূসের রাজনৈতিক প্লানের ডানদিকে জাতীয় পার্টি আর বাম দিকে কমউনিস্ট পার্টি।
তার ভাষায়, “এই কিংস পার্টিগুলোর পাশে রয়েছেন ডানপন্থী জাতীয় পার্টি ও বামঘরানার কমিউনিস্ট পার্টির মতো দলগুলো।” তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ওপর যতটা জুলুম দৃশ্যমান, বাস্তবতা হলো দলটির অনেক প্রভাবশালী নেতা বিশ্বের নানা দেশে ছড়িয়ে পড়েছেন এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করে তুলেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা পর্দার সামনে দেখতে পাচ্ছি, আওয়ামী লীগের ওপরে খুব জুলুম-অত্যাচার হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো- আওয়ামী লীগের অনেক লোক সারা দুনিয়াতে ছড়িয়ে গেছে। তারা আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গনকে অস্থির করে তুলেছে। একজন তরুণ বিতর্কিত সঙ্গীতশিল্পী বলছিলেন, টাকার চেয়ে আকর্ষণীয় কোনো হিরোইজম নেই। আমাদের বীরত্বের বড় মাপকাঠি হলো টাকা।
রনি বলেন, “আমাদের সমাজে আজ বীরত্বের মাপকাঠি হলো টাকা। আর সেই টাকার সবচেয়ে বড় মালিক এখন আওয়ামী লীগের লোকজন। তারা কেউ গা ঢাকা দিয়েছেন, কেউ দেননি, কিন্তু টাকার মালিকানা তাদের হাতেই রয়ে গেছে।”
তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ-ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী গোষ্ঠী যেমন এস আলম, সামিট বা ভারতের আদানিদের সঙ্গে দলটির সম্পর্ক গভীর। এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাদের পরিবার ও আত্মীয়স্বজনদেরও। ফলে রাজনীতি ও অর্থনীতির মধ্যে একধরনের গলদ ঘটেছে, যা রাজনীতির ভবিষ্যৎকে অনিশ্চয়তায় ঠেলে দিচ্ছে।
রাজনৈতিক পরিস্থিতির জটিলতা তুলে ধরে তিনি বলেন, “২০০৯ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত যারা সত্য বলেছে, তারা দেখছে—রাজনীতিতে এখন আম ও দুধ একসাথে মিশে গেছে। এই ঘূর্ণাবর্তে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন ড. ইউনূস ও তার ঘনিষ্ঠজনরা।”
রনি সমাপ্তি টানেন এই অভিযোগ দিয়ে যে, “ড. ইউনূসকে ধ্বংস করতে আন্তর্জাতিক মহলের বিশেষ অংশ সক্রিয়ভাবে কাজ করছে, অথচ তার পক্ষে বলার মতো কণ্ঠ খুবই সীমিত।”