দেশজুড়ে চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে (ইউপি) কেন্দ্র করে একের পর এক আসছে নানা সংঘর্ষের খবর। কখনও ব্যালট পেপার ছিনতাই নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি, আবার কখনও পরাজিত হয়ে বিজয়ী প্রার্থীকে মারধরের অভিযোগও আসছে। আর এরই জের ধরে সম্প্রতি এবার ভোলায়ও ঘটে গেল এমনই একটি ঘটনা।
জানা যায়, ভোলায় দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় খোরশেদ আলম টিটু হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ও এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. জামাল উদ্দিন চকেটকে (চকেট জামাল) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চকেট জামাল পুলিশের কাছে হ’ত্যার পরিকল্পনার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি নির্বাচনে পরাজিত হয়ে বিজয়ী চেয়ারম্যানকে হত্যা করে চেয়ারম্যান পদে বসার ইচ্ছা থেকেই এ হত্যার পরিকল্পনা করেন বলে জানায় পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেন ভোলার পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম। আজ বরিবার (৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার।
পুলিশ সুপার আরো জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চকেট জামাল হত্যার পরিকল্পনা সাথে তার জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। হত্যার বিষয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। যা পরবর্তীতে তদন্তের কাজে সহায়তা করবে। চকেট জামালা নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর তার অনুসারীদের জানান দেন যে, আগামী চার মাসের মধ্যে তিনি দৌলতখান উপজেলার মদনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হবেন। সে অনুযায়ী তিনি বিজয়ী প্রার্থীকে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকেন। গত ২৬ নভেম্বর সদ্য বিজয়ী চেয়ারম্যান নাছির উদ্দিন নান্নু একটি সভায় যোগ দিতে কর্মীদের নিয়ে মদনপুর ইউনিয়নে যান। সেদিন চকেট জামালও দুটি স্পিডবোট নিয়ে মদনপুর যান। পরে সেদিন বিকেলে চেয়ারম্যান নাছির উদ্দিন নান্নু ট্রলারযোগে ভোলায় ফেরার পথে নাছির মাঝি ঘাটের কাছাকাছি আসলে জামাল তার পরিকল্পনা অনুযায়ী একটি স্পিডবোট দিয়ে এসে ট্রলার লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। এসময় ট্রলারটি স্পিডবোটের ওপর উঠিয়ে দিলে বোটটি ডুবে যায়। এতে স্পিডবোটে থাকা অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা নদীতে পড়ে যান। পরে ট্রলারে থাকা লোকাদের ঘাটে নামিয়ে দিয়ে পুনরায় ঘাট থেকে চেয়ারম্যান ২০-২৫ জন অনুসারী নিয়ে সন্ত্রাসীদের ধরতে যান। এসময় সন্ত্রাসীরা তাদেও লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে যুবলীগ নেতা খোরশেদ আলম টিটুর মাথায় গুলি লাগে। এতে তিনি আহত হলে তাকে ভোলা সদর হাসাপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী জামাল উদ্দিনকে প্রধান আসামি করে মোট ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন নিহতের ভাই। আর এর পরপরই নিজ এলাকা থেকে পালিয়ে যান জামাল। পরবর্তীতে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে গত শুক্রবার রাজধানীর একটি এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আদালতে ১০ দিনের রিমাণ্ডের দাবি করা হবে বলে জানিয়ে পুলিশ।