২০১৮ সালের রাতের ভোট নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলেন সাবেক সিইসি

২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে “রাতের ভোট” সংক্রান্ত অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেছেন তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। তিনি জানান, ওই নির্বাচনে প্রশাসন, গোয়েন্দা সংস্থা এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের সহায়তায় রাতে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করা হয়েছিল। মঙ্গলবার (১ জুলাই) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব কথা বলেন তিনি।

সাবেক সিইসি বলেন, “পুলিশ ছিল সরকারের অনুগত। রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তারাও সরকারের আজ্ঞাবহ ছিলেন। পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করেছিল এনএসআই ও ডিজিএফআই। সরকারের ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা দিন নয়, রাতেই ভোট সম্পন্ন করে ফেলেন।”

তিনি আরও বলেন, তৎকালীন ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ ছিলেন মূল ‘সমন্বয়কারী’। “রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নিয়ন্ত্রণ এবং মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে ‘ডিল’ তিনিই করেছেন,” উল্লেখ করে নূরুল হুদা জানান, “অতিউৎসাহী সরকারি কর্মকর্তারা সরকারের হয়ে কাজ করেছেন এবং নির্বাচনকে প্রভাবিত করেছেন।”

জবানবন্দিতে সাবেক সিইসি আক্ষেপ করে বলেন, “একজন সিইসি হিসেবে আমি একা কিছু করতে পারিনি” “অনেক রাজনৈতিক নেতা সরাসরি ভোট জালিয়াতিতে জড়িত ছিলেন। তারা পরে সুবিধাও পেয়েছেন। কমিশনের ভেতরকার অনেক সিদ্ধান্ত আমাকে অন্ধকারে রেখেই বাস্তবায়ন করা হয়েছে।”

তিনি দাবি করেন, “নির্বাচন কমিশনারদের অন্ধকারে রেখে ভোটের নিয়ন্ত্রণ নেয়া হয়। এটা সমন্বিত ষড়যন্ত্র না হলে সম্ভব হতো না।”

এই মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা পিবিআই-এর অতিরিক্ত ডিআইজি এনায়েত হোসেন মান্নান বলেন, “আমরা এই মামলায় স্বচ্ছ ও দৃষ্টান্তমূলক তদন্ত করতে চাই। সাবেক সিইসি নিজের ইচ্ছাতেই আদালতে জবানবন্দি দিতে চেয়েছেন, তাই আমরা তাকে মঙ্গলবার আদালতে পাঠাই।”

২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি কে এম নূরুল হুদা বাংলাদেশের ১২তম প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। তার নেতৃত্বে গঠিত পাঁচ সদস্যের কমিশন ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ বিভিন্ন স্থানীয় নির্বাচন পরিচালনা করে।

এই স্বীকারোক্তির পর রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিরোধী দলগুলো এই জবানবন্দিকে ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে তাদের দীর্ঘদিনের অভিযোগের প্রমাণ হিসেবে দেখছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নূরুল হুদার এ বক্তব্য বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রতি জনআস্থায় বড় ধরনের ধাক্কা দিতে পারে।

Scroll to Top