গত বছরের জুলাই-আগস্টে এক অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তিনি এখনও সেখানেই আছেন। তবে, সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি সংবাদ ছড়িয়ে পড়েছে যে তিনি অনুরোধ করেছেন যে এই পরিস্থিতিতে যদি তিনি মারা যান, তাহলে তাকে দেশেই সমাহিত করা হোক।
মূলত, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্তব্য দাবিতে ‘আমি মারা গেলে নিজের দেশে আজিমপুর কবর স্থানে হলেও আমাকে দাফন করিও’ শীর্ষক শিরোনামে মূলধারার গণমাধ্যম একাত্তর-এর লোগো সম্বলিত একটি ফটোকার্ড প্রচার করা হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এরপরই বিষয়টির সত্যতা কতটুকু, এ নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়েছে ফ্যাক্টচেক গ্রুপ রিউমর স্ক্যানার।
অনুসন্ধানে তারা জানতে পেরেছে, ‘আমি মারা গেলে নিজের দেশে আজিমপুর কবর স্থানে হলেও আমাকে দাফন করিও—শেখ হাসিনা’ শীর্ষক শিরোনামে মূলধারার ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম একাত্তর টিভি কোনো ফটোকার্ড প্রচার করেনি এবং শেখ হাসিনাও সম্প্রতি এমন কোনো মন্তব্য করেননি। প্রকৃতপক্ষে, ‘শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চূড়ান্ত শুনানির জন্য অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ’ শীর্ষক শিরোনামে ‘একাত্তর’-এর প্রচারিত ফটোকার্ডটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
তদন্তে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করা হলে, মূলধারার সংবাদমাধ্যম ‘একাত্তর’-এর লোগো এবং ‘১৯ জুন, ২০২৫’ ফটোকার্ডটি প্রকাশের তারিখ দেখা যায়। এর ভিত্তিতে, ‘একাত্তর’-এর ফেসবুক পেজ এবং ওয়েবসাইটে পর্যবেক্ষণ করা হলে এই সম্পর্কিত কোনও ফটোকার্ড বা সংবাদ পাওয়া যায়নি। তবে, ১৯ জুন একাত্তরের ফেসবুক পেজে ‘শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চূড়ান্ত শুনানির জন্য অ্যামিকাস কিউরির নিয়োগ’ শিরোনামে একটি ফটোকার্ড পাওয়া গেছে।
উল্লিখিত ফটোকার্ডটি পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, উক্ত ফটোকার্ডের লোগো, ছবি, তারিখ এবং ফন্ট আলোচিত ফটোকার্ডের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। তবে, শেখ হাসিনার মন্তব্যের দাবিতে প্রচারিত লেখার লেখা এবং ফন্টে একটি বৈপরীত্য রয়েছে। যদিও একাত্তরের মূল ছবির কার্ডের শিরোনাম ছিল ‘শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চূড়ান্ত শুনানির জন্য অ্যামিকাস কিউরির নিয়োগ’ থাকলেও প্রচারিত ফটোকার্ডটিতে এর পরিবর্তে ‘আমি মারা গেলে নিজের দেশে আজিমপুর কবর স্থানে হলেও আমাকে দাফন করিও—শেখ হাসিনা’ শীর্ষক বাক্য লেখা হয়েছে।
এখান থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে আলোচিত ছবির কার্ডটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্যে একাত্তর টিভির এই ছবির কার্ডটি সম্পাদনা করে তৈরি করা হয়েছিল।
মিডিয়া ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মূল ছবির কার্ড সম্বলিত একাত্তরের পোস্টের মন্তব্য বিভাগে পাওয়া একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ছাত্রলীগ নেতা শাকিল আলম বুলবুলের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগের শুনানিতে এক জন অ্যামিকাস কিউরি (আদালত বন্ধু) নিয়োগ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বিচারপতি মো. গোলাম মূর্তজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনাল-১ বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) এই আদেশ দেন। সেই সাথে এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ২৫ জুন দিন ধার্য করা হয়েছে। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়ার পরেও শেখ হাসিনা ও অপর অভিযুক্ত হাজির না হওয়ার প্রেক্ষাপটে বিচারের স্বচ্ছতার স্বার্থে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এ ওয়াই মশিউজ্জামানের অভিমত ট্র্যাইব্যুনাল শুনবেন বলে জানান প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম।’ উক্ত প্রতিবেদনের কোথাও শেখ হাসিনার নামে প্রচারিত মন্তব্যটি খুঁজে পাওয়া যায়নি।