হাঁপাচ্ছিল। ‘ভাই, আমি একটা কবর খনন করছি। পরে তোমার সাথে কথা বলব।’- মো. আজহার উদ্দিন এভাবেই বলছিলেন।
সে একজন অজ্ঞাত ব্যক্তির জন্য কবর খনন করছিল। প্রতিবেদক প্রথমে আজহার উদ্দিনকে ফোন করেছিলেন এই বিষয়ে জানতে।
আজহার উদ্দিনের মতো আরো কয়েকজন মো. ইব্রাহিম নামে ষাটোর্ধ এক ব্যক্তির দাফনের জন্য কবর খুঁড়ছিলেন। অথচ তার মৃত্যুর খবর শুনে এড়িয়ে যান ছেলে।
লাশ গ্রহন করতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। এমনকি দাফন কাজেও শরিক হতে চাননি। এক পর্যায়ে তিনি মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেন।
পুলিশ এবং স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায় যে, গত সোমবার সকালে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে চট্টগ্রামের ইব্রাহিম নামের ওই ব্যক্তি মারা গেছেন।
খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। অনেক চেষ্টার পর তার পরিচয় নিশ্চিত হয়। বিষয়টি তার একমাত্র ছেলে ইসরাফিল সিয়ামকে জানানো হয়। কিন্তু সে মৃতদেহ গ্রহণে অনিচ্ছা প্রকাশ করে। অবশেষে মঙ্গলবার দুপুরে ‘বাতিঘর’ নামে একটি সংস্থার মাধ্যমে ইব্রাহিমের মরদেহ দাফন করা হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. ওহিদুর রহমান চৌধুরী এ বিষয়ে বলেন, ‘ওই ব্যক্তির কাছে দিনাজপুর এলাকার কয়েকজনের ভিজিটিং কার্ড পাওয়া যায়। ওইসব নম্বরে যোগাযোগ করে জানতে পারি, সেখানে তিনি একটি মাদরাসায় চাকরি করতেন। বেশ কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগের পর জানা যায় ওনার এক ছেলে আছে। ওই ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি লাশ গ্রহন কিংবা দাফনে অংশ নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এমনকি এক পর্যায়ে তিনি নিজের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও বন্ধ করে দেন।’
ছেলের বরাত দিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, চট্টগ্রামের বাসিন্দা ইব্রাহিম মূলত হিন্দু ছিলেন। ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর তিনি প্রায় ৩০ বছর আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার এক মহিলাকে বিয়ে করেন। মহিলাটি একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। কিন্তু ওই নারী ছেলেসহ আরেকজনকে বিয়ে করেন। এরপর থেকে ওই নারী আর ইব্রাহিমের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেননি।
বাতিঘর নামক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা মো. আজহার উদ্দিন বলেন, “আমাদের সংগঠন মূলত বেওয়ারিশ মৃতদেহ দাফন করে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে চার বছরে আমরা ২০০টি মৃতদেহ দাফন করেছি। কিন্তু ইব্রাহিম নামের ওই ব্যক্তির একটি ছেলে থাকা সত্ত্বেও, তাকে এভাবে দাফন করা আমাদের ভীষণ কষ্ট দিয়েছে। পুলিশের মাধ্যমে তথ্য পাওয়ার পর, আমরা লাশ দাফনের উদ্যোগ নিয়েছি। মঙ্গলবার বিকেলে লাশ দাফন করা হয়েছে। তবে, ওই ব্যক্তির পরিবারের কোনও সদস্য সেখানে ছিলেন না।”