জাতীয় পার্টির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় শুদ্ধি অভিযান, একসঙ্গে ৭ শীর্ষ নেতাকে বহিষ্কারের প্রস্তুতি

জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জিএম কাদের সাতজন জ্যেষ্ঠ নেতাকে বহিষ্কার করতে যাচ্ছেন। ২৮ জুন ভেঙে যাওয়া কাউন্সিলে চেয়ারম্যান পদের জন্য কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ জিএম কাদেরকে চ্যালেঞ্জ জানাতে চেয়েছিলেন। একই সাথে কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার একটি প্যানেলের মাধ্যমে মহাসচিব পদ নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। তারা দলের গঠনতন্ত্রের ‘বিতর্কিত’ ২০১(ক) ধারাটি বাতিল করতে চেয়েছিলেন। যার মাধ্যমে চেয়ারম্যান কোনও কারণ না দেখিয়েই যেকোনো নেতাকে বহিষ্কার করতে পারতেন। এই দুই শীর্ষ নেতা, বর্তমান মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু এবং সাতজন নেতাকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই সাথে জিএম কাদের কাউন্সিল ছাড়াই কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শামীম হায়দারকে মহাসচিব ঘোষণা করার পরিকল্পনা করছেন।

দলের তিনটি সূত্র থেকে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। দলটির একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, ঘোষণা না হলেও ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী মহাসচিব হচ্ছেন। সাতজন বহিষ্কার হচ্ছেন, তাদের মধ্যে ‘টপ থ্রি’ রয়েছেন। এডভোকেট মুজিবুল হক চুন্নু, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার।

তিনি বলেন, চেয়ারম্যানকে নতুন করে উজ্জীবিত মনে হচ্ছে। তিনি নির্বাচন নিয়ে পরিকল্পনা করছেন। যাদের কারণে আওয়ামী লীগের সঙ্গ ছাড়তে পারেননি তাদের বাদ দেয়া হচ্ছে। আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টি একটা বড় জোট করার পরিকল্পনাও করছে।

জিএম কাদেরের ঘনিষ্ঠ আরেক নেতা বলেন, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী মহাসচিব হচ্ছেন। জাতীয় পার্টির সম্মেলনের প্রয়োজন নেই। চেয়ারম্যান এটিকে অনুচ্ছেদ ২০ এর ধারা ১(ক) বলতে পারেন। ইতিমধ্যে সাতজন সদস্যকে বহিষ্কার করা হচ্ছে। শনিবার এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। হয়তো দু-একদিনের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হবে।

তিনি বলেন, তবে একটি মক কনফারেন্সও করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে মহাসচিবের জন্য আরও দুটি নাম প্রস্তাব করা হতে পারে। তারা হলেন – সহ-চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেন খোকা এবং প্রেসিডিয়াম সদস্য সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন।

এদিকে, এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির মহাসচিব কাজী মো. মামুনুর রশীদ বলেন, সম্মেলনের সাথে আমাদের কোনও সম্পৃক্ততা নেই।

তিনি বলেন, এডভোকেট মুজিবুল হক চুন্নু, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারকে আমাদের সঙ্গে যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। সময় বলে দেবে কী হবে। আমাদের নির্বাচনী জোটে যাওয়ার ইচ্ছা নাই তবে জাতীয় পার্টির সঙ্গে যারা জোট করতে চান; ইসলামী দল বা আমাদের সমমনা দল আছে এসব দলের সঙ্গে জোট হতে পারে। আমরা বড় কোনো দলের সঙ্গে জোট হতে চাই না। আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট হয়ে জাতীয় পার্টি নিঃশেষ হয়েছে। আর যুক্ত হয়ে জাতীয় পার্টিকে ধ্বংস করতে চাই না।

বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা সত্ত্বেও, শীর্ষ তিন নেতার মন্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি। এদিকে, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বার্তা পাঠিয়ে গণমাধ্যমের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছেন। তিনি ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে তার মুখপাত্র হিসেবে নিয়োগ করেছেন।

তিনি বলেন, জায়গা পেলেই আমরা নতুন কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা করব। মহাসচিব ঘোষণার বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। আমার নাম সংক্ষিপ্ত তালিকায় থাকতে পারে।

তিনি বলেন, বহিষ্কারের বিষয়টি প্রেসিডিয়াম সদস্যদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনজনসহ যতজন শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন তাদের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সমস্ত পদ বাতিল করার জন্য আমাদের জেলা আহ্বায়কদের মিটিং হয় এবং প্রেসিডিয়াম সদস্যদের মিটিং হয়। দুটোতেই সর্বসম্মতিক্রমে এই রেজ্যুলেশনটা পাস হয়। এটা আমাদের গঠনতন্ত্রের ৩০ ধারায় আছে। চেয়ারম্যান প্রেসিডিয়ামের সঙ্গে আলোচনাক্রমে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারেন।

উল্লেখ্য,জাতীয় পার্টি গত ২৮শে জুন চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে কাউন্সিলের ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু স্থান না পাওয়ায় তা বাতিল হয়। এই সম্মেলন ঘিরে নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। জিএম কাদেরকে চ্যালেঞ্জ করে সিনিয়র নেতারা প্যানেল ঘোষণা করায় ওই সম্মেলন স্থগিত করেন জাপা চেয়ারম্যান।

Scroll to Top