বিল পেতে চাও? দাও ঘড়ি অথবা নারী!, প্রকাশ্যে এল ওবায়দুল কাদেরের অজানা অধ্যায়

ওবায়দুল কাদেরের বিলাসবহুল ঘড়ি ও নারীদের প্রতি আসক্তি বহুদিন ধরেই মন্ত্রণালয় ও রাজনৈতিক অঙ্গনের আলোচনার বিষয় ছিল। তিনি একবার প্রকাশ্যে বলেছিলেন, “দশ লাখ টাকার নিচে কোনো ঘড়ি আমি পরি না।” নিজের বাসায় তিনি ঘড়ির জন্য একটি আলাদা শোকেস তৈরি করেছিলেন, যেখানে শোভা পেত বিশ্বের দামি সব ব্র্যান্ডের ঘড়ি। গর্বভরে তিনি বলতেন, “এক মাসে এক ঘড়ি দু’বার পরি না।”

শত কোটি টাকার ঘড়ি ছিল কাদেরের। অথচ একসময় তিনি বাংলার বাণীর ফ্লোরে ঘুমাতেন নিউজপ্রিন্ট বিছিয়ে। দুবেলা খাওয়ার টাকাও থাকত না। বাড়ি ভাড়ার টাকা দিতে পারেননি এজন্য দুবার বাড়ি থেকে উচ্ছেদ হয়েছেন।

মন্ত্রী হওয়ার পর যেন তার জীবনে এল আলাদিনের চেরাগ। হঠাৎ করেই পাল্টে গেল তার জীবনধারা—বিলাসী পোশাক, পারফিউম, উপহার, আর দামি ঘড়ির প্রতি নেশা জন্মাল। যাঁরা ঘড়ি উপহার দিতে পারতেন না, তাঁদের কাছ থেকে সৌন্দর্যবতী নারীদের পাঠানো হতো তার সন্তুষ্টির জন্য।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ঠিকাদারদের মধ্যে এমন একটি ছড়া ছিল: “বিল পেতে চাও যদি, দাও ঘড়ি কিংবা নারী।” নারীদের প্রতি তার দুর্বলতা ছিল সর্বজনবিদিত। তাদের উপস্থিতিতে তিনি নিজের কাজ ভুলে যেতেন। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, তিনি ঠিকাদারদের কাছ থেকে রোলেক্স, পাটেক ফিলিপ, শেফার্ড, উলিস নাডান, লুই ভিটনসহ দুনিয়াজোড়া নামী ঘড়ি উপহার হিসেবে নিতে পছন্দ করতেন। বড় কোনো প্রকল্পে সই দেওয়ার বিনিময়ে কমিশনের পাশাপাশি তিনি এসব ঘড়ি দাবি করতেন।

মন্ত্রণালয়ের পরিচিত মুখেরা জানতেন—তার প্রতিটি ঘড়ির দাম দশ লাখ টাকার নিচে নয়, সবই উপহার। নিজের অর্থে কোনো ঘড়ি কেনার প্রয়োজন পড়ত না।

ঘড়ির পাশাপাশি তার বিলাসবহুল পোশাকের প্রতি ছিল বিশেষ আগ্রহ। একসময় যিনি একই জামা কয়েকদিন ধরে পরতেন, তিনিই পরবর্তীতে আর্মানি, লুই ভিটনের মতো আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড ছাড়া কিছু পরতেন না। সর্বশেষ তাকে দেখা গেছে ‘K’ (Quader) খচিত এক পার্সোনাল ডিজাইনের আর্মানি স্যুটে, যার মূল্য প্রায় ৩০ হাজার ডলার বা প্রায় ৩৮ লাখ টাকা।

তার জুতাও ছিল দামি ব্র্যান্ডের। অথচ তার কোনো বৈধ আয় ছিল না। ব্যবসা করতেন না, সাংবাদিকতা দিয়ে শুরু করে পরে ফুলটাইম রাজনীতিতে যুক্ত হন। প্রশ্ন থেকেই যায়—তাহলে তিনি এত টাকা পেলেন কোথা থেকে?

ওবায়দুল কাদের নিজেই এসব বিলাসবহুল সামগ্রী নিয়ে গর্ব করতেন। সাংবাদিকরা দেখা করতে গেলে তিনি ঘড়ি ঘুরিয়ে দেখিয়ে বলতেন, “এটা ৭৫ লাখ টাকার ঘড়ি।” চশমা দেখিয়ে বলতেন, “ফ্রেমটা ১৫ লাখ টাকার।” স্যুট দেখিয়ে বলতেন, “এইটা ২০ হাজার ডলারের।” কিন্তু কেউ কখনও জিজ্ঞেস করতেন না, একজন মন্ত্রী কিভাবে তার বেতনের চেয়েও বহুগুণ বেশি দামের পোশাক-আশাক পরে?

নারীদের প্রতি তার দুর্বলতাও ছিল প্রকাশ্য। সাধারণ কর্মীরা অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়েও দেখা পেতেন না, কিন্তু নারী কর্মী হলে কোনো অনুমতি লাগত না। ইডেন কলেজ, বদরুনেসা কলেজের মতো ছাত্রীকেন্দ্রিক কর্মসূচিতে তার বিশেষ আগ্রহ ছিল। বহু নায়িকার সঙ্গে তার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

নারীদের মুগ্ধ করতে তিনি গল্প লিখতেন। ‘গাঙচিল’ নামে তার লেখা একটি গল্পের জন্য নায়ক ফেরদৌস ও নায়িকা পূর্ণিমাকে নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়, পরিচালককে দেওয়া হয় ২ কোটি টাকা। এই সিনেমাকে কেন্দ্র করে পূর্ণিমার সঙ্গে নানা অনুষ্ঠানেও অংশ নিতেন কাদের। শুধু পূর্ণিমাই নয়, মাহিয়া মাহিসহ আরও অনেক নায়িকার সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

দলে এটা ছিল ওপেন সিক্রেট—ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা থাকলে কমিটিতে জায়গা পাওয়া সহজ। অনেক নারী এভাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তার ঘনিষ্ঠজনেরা বলতেন, এত বেশি দুর্নীতির অর্থ ছিল যে কোথায় রাখবেন বুঝতেন না—ফলে নারীসঙ্গেই খরচ করতেন।

তার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের একটি বাগানবাড়িতে নিয়মিত যেতেন কাদের। সড়ক পরিদর্শনের অজুহাতে যাওয়া হলেও সেখানে দুপুরে নির্দিষ্ট নারী উপস্থিত না থাকলে তিনি উত্তেজিত হয়ে যেতেন। গালাগালি করতেন, বিরক্তি ছড়াতেন। দলে জানা ছিল—সুন্দরী নারীরা তার সঙ্গে দেখা করলে কমিটিতে তাদের জায়গা পাওয়া সহজ হয়ে যায়।

১২ বছর মন্ত্রী ও ১০ বছর দলের সাধারণ সম্পাদক থাকা অবস্থায় হাজার হাজার কোটি টাকার লুটপাট করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এত সম্পদের মালিক হওয়ার পর তার নারীপ্রীতি যেন ছিল অস্বাভাবিক কিছু নয়। তার বিত্ত ও নারীসঙ্গের প্রতি আসক্তি তাকে সমাজে হাস্যকর ও বিরক্তিকর এক চরিত্রে পরিণত করেছে।

বর্তমানে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের তদন্ত চলছে। দেশে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশের বাইরেও তার বিপুল পরিমাণ অর্থ থাকতে পারে, যা তিনি পাচার করেছেন। এখন জাতি আশা করছে, সরকার আন্তরিকভাবে সেই অর্থ উদ্ধারে পদক্ষেপ নেবে।

Scroll to Top