বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম ৫০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা (DA) দাবি করেছেন। বুধবার সচিবালয়ের ৬ নম্বর ভবনের নিচে নতুন মন্ত্রণালয় ভবনের কাছে আয়োজিত এক প্রতিবাদ কর্মসূচিতে তিনি এই দাবি জানান।
আগামী জুলাই মাস থেকে নতুন মহার্ঘ ভাতার হার কার্যকর হবে বলে জানা গেছে। এবার প্রথম থেকে নবম গ্রেডের কর্মচারীরা তাঁদের মূল বেতনের ১৫% হারে এবং দশম থেকে বিংশ গ্রেডের কর্মীরা তাঁদের মূল বেতনের ২০% হারে মহার্ঘ ভাতা পাবেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়েছে এবং এটি সরকারের বাজেট ঘোষণার অংশ হিসেবে এসেছে।
নুরুল ইসলাম বলেছেন, ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ বাতিল করা না হলে আগামীকালও (বৃহস্পতিবার) তারা সচিবালয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করবেন।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধা বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছেন। বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেন, “২০১৫ সালের পর কোনো বেতনকাঠামো না হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এবারের বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধার পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করছি।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের আট বিভাগে সম্মেলনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়ে গেছে। আলোচনার নামে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আস্থা ভঙ্গ করেছেন, বিশ্বাস নষ্ট করেছেন। আমরা চাই আমাদের ৫০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হোক। এ ছাড়া যারা ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলা রয়েছেন, তাদের তাড়াতে হবে।”
এই নেতা বলেছেন, “আমরা সরকারি কর্মচারী, আমরা নিয়ম-শৃঙ্খলায় বিশ্বাসী। অধ্যাদেশ বাতিল না হলে রোববার (২২ জুন) আরও বৃহত্তর আন্দোলন আসবে।”
এর আগে, সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সভাপতি মো. বাদিউল কবীর জানিয়েছেন যে, চাকরি অধ্যাদেশ পুরোপুরি বাতিল না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে।
গত ২২ মে উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনের পর, ২৪ মে থেকে সচিবালয়ের কর্মচারীরা সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের খসড়া বাতিলের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন।
কর্মচারীদের আন্দোলনের মধ্যেই ২৫ মে রাতে সরকার এই অধ্যাদেশ জারি করে। অধ্যাদেশ অনুযায়ী, চার ধরনের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধের জন্য বিভাগীয় মামলা ছাড়াই শুধু কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে চাকরিচ্যুত করা যাবে।
সরকারি কর্মচারীরা এই অধ্যাদেশকে নিপীড়নমূলক ও কালো আইন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এটি বাতিল করার জন্য তারা সচিবালয়ে বিক্ষোভ মিছিল, কর্মবিরতি, অবস্থান কর্মসূচির পাশাপাশি আজ (বুধবার) সমাজকল্যাণ উপদেষ্টাকে স্মারকলিপিও দিয়েছেন।
অর্থ উপদেষ্টা তাঁর বাজেট বক্তৃতায় “মহার্ঘ ভাতা” নিয়ে সরাসরি কোনো উল্লেখ করেননি। শুধু বাজেট বক্তব্যেই নয়, তিনি কখনোই মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বে আসার পর গত বছরের নভেম্বর মাস থেকে সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়। এই বছরের জানুয়ারি থেকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার জন্য একটি কমিটি কাজ শুরু করে। যখন বিরূপ সমালোচনা শুরু হয়, তখন সরকার পরে পিছু হটে। গত মাসে নতুন করে আলোচনাটি আবার শুরু হয়। এই বিষয়ে গঠিত কমিটি প্রথম থেকে নবম গ্রেডের সরকারি কর্মচারীদের জন্য মূল বেতনের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ এবং দশম থেকে বিংশ গ্রেডের কর্মচারীদের জন্য ২০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতার সুপারিশ করে।
বাজেট সংক্ষিপ্তসার অনুযায়ী, আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন বাবদ ১৩,৪৮৩ কোটি টাকা এবং কর্মচারীদের বেতন বাবদ ৩০,০৪৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তাঁদের ভাতা বাবদ বরাদ্দ ৪১,১৫৩ কোটি টাকা। বেতন-ভাতায় মোট বরাদ্দ করা হয়েছে ৮৪,৬৮৪ কোটি টাকা। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য মোট বরাদ্দ ছিল ৮২,৯৭৭ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ১,৭০৭ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ছে।