মঙ্গলবার যমুনা রাজ্য অতিথি ভবনে অস্ট্রেলিয়ার ভিসা কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি নবনিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনার সুসান রিলেকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে যে, এখন থেকে বাংলাদেশিরা ঢাকা থেকে অনলাইনে অস্ট্রেলিয়ার ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
হাইকমিশনার রিলে বলেন যে, বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় ৬৫,০০০ এরও বেশি বাংলাদেশি বসবাস করছেন, যাদের মধ্যে প্রায় ১৪,০০০ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীও যুক্ত রয়েছেন।
সাক্ষাৎকালে তারা আরও আলোচনা করেন— অন্তর্বর্তী সরকারের চলমান সংস্কার কার্যক্রম, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য প্রসার এবং রোহিঙ্গা সংকটের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন,“আমরা এখন রূপান্তরের এক যুগের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। সাংবিধানিক, বিচার বিভাগীয় এবং প্রশাসনিক সংস্কার আমাদের মূল লক্ষ্য, যাতে একটি শক্তিশালী এবং টেকসই বাংলাদেশ গড়ে তোলা যায়।” তিনি বলেন, আগামী মাসে জুলাই অভ্যুত্থানের বার্ষিকীতে ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণা করা হবে, যা শান্তিপূর্ণ রূপান্তরের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
নির্বাচন সম্পর্কে তিনি বলেন, “এই নির্বাচনে জনগণ, বিশেষ করে তরুণরা যারা প্রথমবারের মতো ভোট দিতে যাচ্ছেন, তারা স্বাধীনভাবে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন। এটি হবে একটি উৎসবমুখর এবং আশাব্যঞ্জক নির্বাচন।”
অস্ট্রেলিয়ার পক্ষ থেকে হাইকমিশনার বলেন, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) মাধ্যমে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা জোরদার করার জন্য ২ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার প্রদান করা হবে।
দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, “গত পাঁচ বছরে অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশ বাণিজ্য ১৬.২% বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এখন ৫ বিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলারে পৌঁছেছে।”
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের অবদানের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়া অ্যাওয়ার্ডস’ কর্মসূচির আওতায় এখন পর্যন্ত ৩,০০০-এরও বেশি বাংলাদেশি প্রাক্তন শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, যারা দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
প্রধান উপদেষ্টা এই প্রসঙ্গে বৃত্তির সংখ্যা আরও বাড়ানোর অনুরোধ জানান।
রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও আলোচনা করা হয়। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশে প্রায় দশ লক্ষ রোহিঙ্গার জন্য অস্ট্রেলিয়ার মানবিক সহায়তা প্রয়োজন। জবাবে হাইকমিশনার বলেন, “আমরা সম্প্রতি অতিরিক্ত ৯.৬ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার মানবিক সহায়তা প্রদান করেছি। এর ফলে ২০১৭ সাল থেকে মোট সহায়তা ৫৫৩.৬ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।”
তিনি আরও আশ্বস্ত করেন, “মিয়ানমারে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হলে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ এবং টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশের পাশে থাকবে।”
বৈঠক শেষে হাইকমিশনার রাইলি বলেন, “আমি বাংলাদেশে আসতে পেরে খুবই আনন্দিত। বাংলাদেশের প্রাণবন্ত সংস্কৃতি এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আমি দীর্ঘদিন ধরেই গভীরভাবে আগ্রহী।”
সাক্ষাৎকালে আরও উপস্থিত ছিলেন— প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি সমন্বয়কারী লামিয়া মোর্শেদ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় উইংয়ের মহাপরিচালক মোহাম্মদ নূরে আলম।