জামায়াতে ইসলামী (জেআই) লন্ডনে তাদের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে বৈঠককে স্বাগত জানিয়েছে। তবে বৈঠকের পরে যৌথ বিবৃতি ও সংবাদ সম্মেলনের প্রতিবাদে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের গতকাল মঙ্গলবারের দ্বিতীয় ধাপের মুলতবি সভা প্রতীকী বয়কট করেছিলেন বলে জানিয়েছেন দলের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তাঁদের আপত্তির বিষয়টি নিয়ে গতকাল প্রধান উপদেষ্টা জামায়াতের আমিরের সঙ্গে কথা বলেছেন বলেও জানান মোহাম্মদ তাহের।
আজ বুধবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংলাপের দ্বিতীয় পর্বের স্থগিত অধিবেশনের মধ্যাহ্নভোজের বিরতির সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ তাহের এ কথা বলেন।
দলীয় নেতারা মনে করেন যে প্রধান উপদেষ্টার লন্ডন সফরের সময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে বৈঠকের যৌথ ঘোষণায় জামায়াতকে ‘উপেক্ষা’ করা হয়েছে। তারা প্রতিবাদস্বরূপ গতকালের সংলাপে যোগ দেননি। তবে, দলের প্রতিনিধিরা আজ সংলাপে অংশ নিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে জামায়াত নেতা তাহের বলেন, “প্রধান উপদেষ্টার লন্ডন সফরের কিছু দিক নিয়ে আমরা আপত্তি জানিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছিলাম। এটাই আমাদের দলের অবস্থান। প্রধান উপদেষ্টা লন্ডনে গিয়েছিলেন পুরস্কার আনতে, টাকা ফেরত আনার জন্য। উনার উপস্থিতিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত প্রধানের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। সেটিকে আমরা স্বাগত জানিয়েছি। নির্বাচনের তারিখের বিষয়েও আমাদের আপত্তি নেই। আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, জাতির উদ্দেশে ভাষণে নির্বাচনের একটি সম্ভাব্য তারিখের কথা বলেছিলেন। সেটিও আলোচনার মাধ্যমে পরিবর্তন করা যেতে পারে। কিন্তু ভালো হতো দেশে এসে আলোচনা করে তারিখের বিষয়ে পুনরায় বললে। কিন্তু সেটা করেননি।’
যৌথ বিবৃতিকে বিশ্বের ইতিহাসে একটি বিরল ঘটনা হিসেবে বর্ণনা করে তাহের বলেন, “বিশ্বের ইতিহাসে এমন কোনও ঘটনার কথা আমরা জানি না। বিভিন্ন দেশে সরকার, প্রধান বিরোধী দল বা সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী ব্যক্তিদের সাথে যৌথ বিবৃতি দেওয়া হয়। দেশে শতাধিক দল রয়েছে। তাহলে তো দেশে এমন একটি সংস্কৃতি তৈরি হবে, উনি (প্রধান উপদেষ্টা) যাঁর সঙ্গে কথা বলবেন, একটা যৌথ বিবৃতি দিতে হবে। এটা নজিরবিহীন, প্রপার ছিল না। এতে অন্যান্য দল বিব্রত হয়েছে। যৌথ বিবৃতি ও সংবাদ সম্মেলনে আমাদের আপত্তি। বিএনপির ব্যাপারে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই।’
তাহের বলেন, ‘আমরা মনে করি প্রধান উপদেষ্টা তার নিরপেক্ষতা হারিয়ে ফেলেছেন। যদি এভাবে চলতে থাকে, তাহলে সংস্কার কমিশন খুব বেশি এগোতে পারবে না। এটা অনেকটা পর্বতের মূষিক প্রসব হয়ে দাঁড়াবে। সে কারণে প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে গতকাল আসিনি।’
তাহের বলেন, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা গতকাল জামায়াত নেতাদের সাথে কথা বলেছেন, ‘গতকাল দুপুরে পরে প্রধান উপদেষ্টা আমাদের আমিরের সঙ্গে কথা বলেছেন। আমরা আমাদের কথা বলেছি, উনি (প্রধান উপদেষ্টা) কিছুটা অনুধাবন করতে পেরেছেন। তিনি আশ্বস্ত করেছেন, উনার সরকার নিরপেক্ষ, উনারা কোনো বিশেষ দল বা গোষ্ঠীর প্রতি ঝুঁকে নেই। আগামী দিনে এসব ব্যাপারে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবেন এবং যত্নবান হবেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আজকের বৈঠকে এসেছি।’
জামায়াত নেতা বলেন, ‘আমরা চাই না যে কোনও অচলাবস্থা তৈরি হোক। আমরা সর্বদা সরকারের সাথে সহযোগিতা করেছি। তবে যদি কোনও বিচ্যুতি হয়, তাহলে আমাদের কথা বলতে হবে।’