সরকারের সঙ্গে দ্বন্দ্বে যাবে না, নমনীয় হবে বিএনপি

লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এখন সরকারের সঙ্গে যেকোনো প্রকার সংঘাত এড়াতে আগ্রহী। তারা মনে করে, লন্ডন বৈঠক বিগত কয়েক মাসে বিএনপি ও অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে তৈরি হওয়া দূরত্ব কমিয়েছে এবং একটি বোঝাপড়া তৈরি করেছে, যা ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছে। দলটি আশঙ্কা করছে যে সরকারের সঙ্গে যেকোনো নতুন বিরোধ নির্বাচনকে অনিশ্চিত করে তুলবে।

গত সোমবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির নিয়মিত সভায় সরকারের সঙ্গে সংঘাতে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। বৈঠকে স্থায়ী কমিটির অধিকাংশ সদস্য মত দেন যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি মেয়র হিসেবে দলের নেতা ইশরাক হোসেনের শপথ গ্রহণ না করানোর প্রতিবাদে চলমান আন্দোলন থেকে সরে আসা উচিত।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য জানান, ইশরাক হোসেনের চলমান আন্দোলন এবং নিজেকে নিজে মেয়র ঘোষণা করে সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে বৈঠক করা নিয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়। সেখানে উপস্থিত অধিকাংশ সদস্য এই আন্দোলন থেকে সরে আসার পক্ষে মত দেন, কারণ তারা মনে করেন এটি বিএনপি ও সরকারের মধ্যে আরও দূরত্ব তৈরি করবে। তবে, স্থায়ী কমিটির কিছু সদস্য যুক্তি দেন যে আদালত এবং নির্বাচন কমিশন গেজেট প্রকাশের পরও ইশরাককে মেয়র হিসেবে শপথ না করানোটা একটি ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত।

স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, ইশরাকের বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। পক্ষে-বিপক্ষে মতামত এসেছে। তবে, কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। আপাতত মেয়র ইস্যুকে কেন্দ্র করে বিএনপির চলমান আন্দোলন কিছুটা নরম হবে। এই স্থায়ী কমিটির সদস্য মঙ্গলবারে (১৭ জুন) ইশরাক হোসেনের নগর ভবনে যাওয়া এবং সেখানে বৈঠক করার ঘটনায় বিস্মিত হন।

মঙ্গলবার বিকেলে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি ইশরাক হোসেনের ইস্যুটিও স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হলে দলই তা জানাবে।

স্থায়ী কমিটির ওই বৈঠকে লন্ডনে ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক নিয়েও আলোচনা হয়, যদিও আলোচনা খুব বেশি এগোয়নি। বৈঠকের শুরুতে তারেক রহমানকে লন্ডন বৈঠকের ফলপ্রসূতার জন্য অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানানো হয়। তবে, ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের মধ্যে একান্ত বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে, তা নিয়ে সভায় কোনো আলোচনা হয়নি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, “আমরা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে সুন্দর ও সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে বৈঠক শেষ করার জন্য অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানাই। এরপর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বৈঠকের বিস্তারিত আমাদের জানাননি। আমরাও কিছু জানতে চাইনি, কারণ এটি আমাদের এখতিয়ারবহির্ভূত ছিল।”

মঙ্গলবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, স্থায়ী কমিটির বৈঠকের আলোচনা বিষয়ে যা জানানোর প্রয়োজন, তা দলের মহাসচিব সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানাবেন। তিনি যোগ করেন, “এ নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানানো হয়েছে।”

Scroll to Top