চলমান রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার এক সিদ্ধান্ত দেশের রাজনীতির গতিপথ নাটকীয়ভাবে বদলে দিয়েছে। আন্দোলনের প্রস্তুতিতে যখন রাস্তাঘাট উত্তাল হয়ে উঠতে শুরু করেছিল, তখন বেগম জিয়ার স্পষ্ট বার্তা উত্তেজনার প্রবাহকে থামিয়ে দেয়। তিনি বলেন – *আন্দোলন নয়, এখন আলোচনার সময়*।
ঈদের ঠিক আগে, যখন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছিলেন যে বিএনপির কর্মসূচি জনদুর্ভোগের কারণ হতে পারে, তখন বেগম জিয়া এক সভায় দলের সিনিয়র নেতাদের জানিয়ে দেন যে দলকে এখন সংঘাতের নয়, আলোচনার পথে এগিয়ে যাওয়া উচিত। এই বার্তার পরপরই বিএনপির রাজনীতিতে ইতিবাচক মোড় শুরু হয়।
দলীয় সূত্র জানায়, চেয়ারপারসনের স্পষ্ট নির্দেশে নেতাকর্মীদের রাজপথের প্রস্তুতি থেকে সরে আসতে বলা হয়েছে। তার এ নির্দেশনার পরপরই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সৌজন্য সাক্ষাৎকে দল ‘গঠনমূলক পদক্ষেপ’ হিসেবে স্বাগত জানায়। রাজনৈতিক অঙ্গনে এই সাক্ষাৎকে আলোচনা-নির্ভর রাজনীতির সম্ভাব্য শুরু হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, বেগম খালেদা জিয়া আবারও প্রমাণ করেছেন যে তিনি কেবল একজন দলীয় নেত্রী নন, একজন দূরদর্শী রাষ্ট্রনায়কও। প্রতিকূল সময়েও যিনি শান্তিপূর্ণ সমাধানকে অগ্রাধিকার দেন। তাঁর উদ্যোগ রাজনীতিকে সংঘাতের পথ থেকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে এসেছে।
ঈদের রাতে (২০ জুন) দলের শীর্ষ নেতাদের সাথে এক বৈঠকে বেগম জিয়া বলেন, “প্রকাশ্য সংঘাতে না গিয়ে আলোচনার মাধ্যমে দাবিগুলো উপস্থাপন করতে হবে।”
এই একটি কথার মাধ্যমেই আন্দোলনের উত্তেজনা থেমে যায়। দলের ভেতরে সংঘাতপ্রবণ মানুষের অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়ে।
রাজনৈতিক বাস্তবতায় এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একদিকে যেমন উত্তেজনার সমাধান হয়েছে, অন্যদিকে দেশের মানুষও অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথে আশার আলো দেখতে পাচ্ছে।
২০০৯ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত, সরকারবিরোধী অবস্থান গ্রহণের সময় বেগম জিয়া বারবার নির্যাতন, ভুয়া মামলা, কারাবাস, সন্তান হারানোর শোক এবং চিকিৎসা বঞ্চনার মতো নিষ্ঠুর বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছেন। তবুও, প্রতিহিংসাপরায়ণ হওয়ার পরিবর্তে, তিনি দেশের বৃহত্তর স্বার্থে শান্তির বার্তা দিয়েছেন।
রাজনীতিতে তার ধৈর্য, কৌশল এবং আত্মসংযম তাকে আজও সাধারণ মানুষের কাছে শ্রদ্ধার প্রতীক করে তুলেছে। ক্ষমতার বাইরে থাকলেও, তিনি আজ রাজনৈতিক ভারসাম্যের কেন্দ্রবিন্দুতে।
যখন রাজনৈতিক সংঘাত প্রায় নিয়মে পরিণত হচ্ছিল, তখন বেগম খালেদা জিয়ার একটি সিদ্ধান্ত মনে করিয়ে দিল— রাজনীতি কেবল প্রতিযোগিতা নয়, এটি দায়িত্ব ও বিবেকেরও ক্ষেত্র।
তিনি প্রমাণ করেছেন, একটি সঠিক সময়ে দেওয়া বার্তা কিভাবে একটি জাতিকে সংঘাত থেকে আলোচনার পথে ফিরিয়ে আনতে পারে।দেশবাসী আজ শান্তিপূর্ণ ও অবাধ নির্বাচনের অপেক্ষায়। আর সেই পথ যদি আলোচনার মধ্য দিয়ে সুগম হয়, তাহলে নিঃসন্দেহে বেগম জিয়ার এই সিদ্ধান্ত একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক হয়ে থাকবে।