দেশে চলমান রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে, লন্ডনের দ্য ডরচেস্টার হোটেলে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে বৈঠক হয়। প্রায় দেড় ঘন্টা ধরে চলা রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পর উভয় পক্ষই এই বৈঠককে “ফলপ্রসূ” বলে অভিহিত করে।
এই বৈঠকের প্রেক্ষাপটে বিএনপির উপদেষ্টা মাহদী আমিন বলেন, নির্বাচন, ন্যায়বিচার এবং সংস্কার সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি নিয়ে দুই নেতার মধ্যে গভীর আলোচনা হয়েছে। তিনি বিশ্বাস করেন যে এই বৈঠকের মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা অনেকাংশে লাঘব হতে শুরু করেছে। তার ভাষায়, “এই আলোচনার পর যে সৌহার্দ্য ও আন্তরিকতা তৈরি হয়েছে তা সংকটের কালো মেঘ দূর করতে সহায়ক হবে।”
এর আগে, দেশের প্রধান উপদেষ্টা বলেছিলেন যে জুলাই সনদের আগে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হলে চলমান সংস্কার প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে। সে বিবেচনায় বলা হয়েছে যে, পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হতে পারে। তবে, সেই সময়ের পরিস্থিতি বিবেচনায়, নির্বাচন ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে পারে।
বিএনপি এই বৈঠককে রাজনৈতিক অচলাবস্থার অবসান বলে দেখলেও, ছাত্রদের নতুন দল এনসিপিএ-র উত্থানকে ঘিরে নতুন সংকটের আশঙ্কাও করা হচ্ছে। কেউ কেউ মনে করছেন, যদি একটি দল দেশের জাতীয় এজেন্ডাকে জিম্মি করে রাজনৈতিক সুবিধা আদায় করে, তাহলে সেটা গণতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ।
তবে এবি পার্টি ও গণসংহতি আন্দোলনের নেতারা বৈঠককে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তাদের আশা, এই আলোচনার পর প্রধান উপদেষ্টা অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও সংলাপে বসবেন এবং একটি কার্যকর ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হবে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রাক্তন প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান মনে করেন যে নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণে যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছিল তা মূলত ভেঙে গেছে। তবে বিশ্লেষক ড. দিলারা চৌধুরী মনে করেন যে, এখনও সব সংকট কাটেনি। তার মতে, “গণতন্ত্রে মতপার্থক্য থাকবেই, কিন্তু আলোচনার মাধ্যমে সেগুলো সমাধান করা গুরুত্বপূর্ণ। এই বৈঠক সেই পথে অগ্রসর হওয়ার একটি ধাপ মাত্র।”
তিনি আরও বলেন, ডঃ ইউনূস যেভাবে নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ দিয়েছেন তা সরাসরি নয়, বরং শর্তসাপেক্ষ। সংস্কার ও বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হলে এবং বিএনপি সহ রাজনৈতিক দলগুলি সংলাপে সক্রিয় ভূমিকা পালন করলে শীঘ্রই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন যে, মৌলিক সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা এবং বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলি আন্তরিক ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করলেই কেবল একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব হবে।