অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়নি, বরং রাজনৈতিক নিরাপত্তার স্বার্থে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।
বুধবার (১১ জুন) লন্ডনের বৈদেশিক নীতি বিষয়ক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক চ্যাথাম হাউসে এক কথোপকথনের সময় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এই কথা বলেন।
চ্যাথাম হাউসের পরিচালক ব্রনওয়ে ম্যাডক্সের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এক কথোপকথনে প্রধান উপদেষ্টা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তিনটি দায়িত্ব বাস্তবায়নের জন্য গৃহীত পদক্ষেপের বিস্তারিত বর্ণনা দেন, সংস্কার, জুলাইয়ের গণহত্যার বিচার এবং নির্বাচনের কথা উল্লেখ করেন।
সেখানে সঞ্চালক তাকে প্রশ্ন করেন, যে জুলাই সনদ হচ্ছে, সমালোচকেরা বলবেন, অনেক রাজনৈতিক দলকে এর বাইরে রাখা হচ্ছে, যারা এর সঙ্গে একমত নয়, যেমন আওয়ামী লীগ; তাদের জন্য কোনো জায়গা রাখছেন না। সুতরাং, মানুষকে কোনো বিকল্প দেওয়া হচ্ছে না। তারা বলছে, এটা একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নয়। এটা ঐকমত্য সম্পর্কে অনেক কথায় সুন্দরভাবে মোড়ানো বাংলাদেশের জন্য একটি কর্তৃত্ববাদী পদক্ষেপ।
জবাবে ড. ইউনূস বলেন, হ্যাঁ। ঠিক আছে, এ নিয়েও বিতর্ক আছে। বিতর্ক হলো আওয়ামী লীগ কি রাজনৈতিক দল? যদি তারা এভাবে রাস্তায় তরুণদের হত্যা করতে পারে, মানুষকে এভাবে গুম করতে পারে, তাহলে কি আমরা এখনও এটিকে রাজনৈতিক দল বলতে পারি? সুতরাং এটি একটি বিতর্ক। এটি কোনো সিদ্ধান্ত নয়।
তিনি বলেন, আমরা ভেবেছিলাম, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার প্রস্থানের পর এটি শেষ হবে। এখন এটি একটি নতুন দেশ, যেখানে তারা নেই। কিন্তু যারা পালিয়ে গেছে, তাদের জন্য এটা শেষ হয়নি। অনুপস্থিত থেকেও অন্য দেশ থেকে একইভাবে কাজ চালিয়ে গেছে, মানুষকে উসকানি দিচ্ছে, রাস্তায় সংঘর্ষ করছে। এখন ১০ মাস পার হয়ে গেছে, এর মধ্যে দলটির কেউ অনুশোচনা, দুঃখ প্রকাশ বা দোষ স্বীকার করেনি। বলেনি, কেউ আদেশ দিয়েছে, তাতে কেউ নিহত হয়েছে, আমি এর জন্য দায়ী নই। আমার খারাপ লাগছে যে আমাকে এটার অংশ হতে হয়েছে। তাদের মধ্যে এমন কেউ নেই। ফলে আমাদের কাছে এটা শেষ, কিন্তু তাদের কাছে এটা এখনো চলছে।
বাংলাদেশ সরকারের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান বলেছেন, আমরা নিরাপদ বোধ করি না; তারা রাস্তায় বিক্ষোভ করে, মানুষকে হুমকি দেয়। তারা ইতিমধ্যেই এই অভ্যুত্থানের নেতাদের হুমকি দিয়েছে। তাই, দেশের নিরাপত্তার জন্য, দেশের রাজনীতির নিরাপত্তার জন্য, জাতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নির্দিষ্ট সময়ের জন্য স্থগিত রাখা হবে। আমরা এটুকুই করেছি। আমরা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করিনি। বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম স্থগিত থাকবে।
সেই সময়, উপস্থাপক জিজ্ঞাসা করেছিলেন, বিচারের বিষয়টি পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের উপর কেন ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে না? অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কেন এটি নিয়ে কাজ করবে?
জবাবে, ড. ইউনূস বলেন, আমি এই সিদ্ধান্ত নিইনি। যারা আমাদের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তারা আমাদের এই দায়িত্ব দিয়েছিলেন।
নির্বাচনের তফসিল নিয়ে বাংলাদেশে চলমান বিতর্কের প্রসঙ্গ তুলে উপস্থাপক বলেন, সামগ্রিকভাবে অনেকেই বলছেন যে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না।
জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এটা হবে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে সুন্দর নির্বাচন। সময় ঠিক আছে, জনগণও প্রস্তুত। ১৭ বছর পর আপনি একটি সত্যিকারের নির্বাচন পাচ্ছেন। আগামী নির্বাচন একটি নতুন সরকার নির্বাচনের রুটিন ভোট হবে না, এটা হবে নতুন বাংলাদেশের জন্য ভোট। আমরা পুরোনো বাংলাদেশকে বিদায় বলে নতুন বাংলাদেশ তৈরি করতে চাই।
বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমের ওপর দমন–পীড়নের অনেক খবর পাওয়ার কথা উল্লেখ করে এ ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টার প্রতিক্রিয়া জানতে চান সঞ্চালক। জবাবে ড. ইউনূস বলেন, এটা সত্যি নয়। তাদের জীবনে এত স্বাধীনতা কখনো ছিল না। তারা যা খুশি বলতে পারছে।