যখন পুরো বিশ্ব ইলন মাস্কের স্টারলিংক এবং তার স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করছে, তখন ক্যালিফোর্নিয়া-ভিত্তিক স্টার্টআপ ‘তারা’ নীরবে আরেকটি প্রযুক্তি বিপ্লব তৈরি করছে। তারা স্যাটেলাইট বা ফাইবার ছাড়াই উচ্চ-গতির ইন্টারনেট সরবরাহ করছে – সহজে, সাশ্রয়ী মূল্যে এবং পরিবেশ বান্ধব উপায়ে।
‘তারা’ প্রযুক্তির জন্য মাটি খনন করে ফাইবার বিছানোর প্রয়োজন হয় না। যা প্রয়োজন তা হল উভয় প্রান্তে ‘লাইট ব্রিজ’ স্থাপন করা। এক প্রান্তে একটি লেজার প্রজেক্টর এবং অন্য প্রান্তে একটি রিসিভার । এই লেজার সরাসরি এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ডেটা পাঠায়, যা স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের চেয়ে ১০ থেকে ১০০ গুণ দ্রুত।
ছোট আকারের ছাদ-বান্ধব লাইট ব্রিজ ব্যবহার করে তারা এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ২০ কিলোমিটার দূরত্বে প্রতি সেকেন্ডে ২০ গিগাবাইট গতিতে ইন্টারনেট পাঠাতে সক্ষম। এর ফলে শহর হোক বা প্রত্যন্ত গ্রাম—সবখানে একই গতিতে ইন্টারনেট পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে।
এই লেজারের পথে বৃষ্টি, কুয়াশা বা পাখির আঘাতের মতো প্রাকৃতিক বাধা যাতে সমস্যা সৃষ্টি না করে, সেজন্য তারা একটি উন্নত ‘অটো ট্র্যাকিং সিস্টেম’ ব্যবহার করছে। এই সিস্টেমটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে লেজারের অবস্থান এবং দিক সামঞ্জস্য করে, যার ফলে একটি স্থিতিশীল, স্থিতিশীল এবং নির্ভরযোগ্য সংযোগ তৈরি হয়।
এই প্রযুক্তি ইতিমধ্যে ১২টি দেশে সফলভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। কঙ্গো নদীর উভয় তীরে অবস্থিত আফ্রিকার রাজধানী – ব্রাজাভিল এবং কিনশাসা – মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে ‘তারার’ লেজার লিঙ্কের সাথে সংযুক্ত হয়েছে এবং ৭০০ টেরাবাইট ডেটা স্থানান্তর করেছে, যা ৯৯.৯৯ শতাংশ আপটাইম নিশ্চিত করেছে।
২০২৬ সালে ‘তারা’ বাজারে আনতে যাচ্ছে আরও উন্নত ‘ফোটনিক্স চিপ’ সংস্করণ, যা ব্যবহার করা যাবে ড্রোন, স্বয়ংক্রিয় যানবাহন এবং ইন্টারনেট অব থিংস (IoT) ডিভাইসেও। দুর্যোগের সময়ও এই প্রযুক্তি ফাইবার নেটওয়ার্কের ব্যাকআপ হিসেবে কাজ করতে পারবে।
ইন্টারনেটের অদ্ভুত এই আলোর সেতু যেন ডিজিটাল পৃথিবীর নতুন দিগন্ত উন্মোচনের বার্তা দিচ্ছে।