আমার পাওয়ার দরকার নাই পাওয়ার আমার পিছে ঘোরে, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন

রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় দায়ের করা অস্ত্র আইনের মামলায় শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনের আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। একই মামলায় তার তিন সহযোগী—আবু রাসেল মাসুদ ওরফে মোল্লা মাসুদ, আরাফাত ইবনে নাসির ওরফে শুটার আরাফাত এবং এমএএস শরীফের ছয় দিন করে রিমান্ড দিয়েছেন ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসাইন। বুধবার (২৮ মে) দুপুরে শুনানি শেষে এই আদেশ দেওয়া হয়।

আদালতে হাজিরের সময় সুব্রত বাইন নিরাপত্তা বলয়ে মাথায় হেলমেট, বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও হাতে হাতকড়া পরিহিত ছিলেন। পরে কাঠগড়ায় উঠিয়ে তার হেলমেট ও এক হাতের হাতকড়া খোলা হলে সুব্রত হেসে ওঠেন এবং অপর হাতের হাতকড়াও খুলে দিতে পুলিশের কাছে অনুরোধ জানান। পুলিশের আপত্তির মুখে, তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, “আপনারা ছবি-ভিডিও নেন, তবে সত্যটা লিখবেন। হলুদ সাংবাদিকতা যেন না হয়।”

সুব্রত বাইন আরও বলেন, ‘আমার কোনো পাওয়ার নাই। পাওয়ার দরকারও নাই। পাওয়ার আমার পিছে ঘোরে। সর্বশ্রেষ্ঠ পাওয়ারকে আমি সেজদাহ করি।’ তিনি দাবি করেন, “১৯৮৭ সাল থেকে আমি কোনো প্রতিবাদ করিনি। আমাকে আয়নাঘরে রাখা হয়েছিল আড়াই বছর ধরে। সাংবাদিকরা এত কিছু লেখেন, কিন্তু সেই খবর রাখেন না।”

তিনি আরও বলেন, “আমি অস্ত্র রাখি, কারণ আমার অনেক শত্রু। বাঁচার জন্য অস্ত্র রাখতে হয়। আমি মিথ্যা বলব না যে আমার কাছে অস্ত্র নেই।” পাশাপাশি তিনি উল্লেখ করেন, “আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তার কোনো প্রমাণ নেই। আমি ছিনতাইকারী বা চাঁদাবাজ নই।”

আসামির পক্ষে আইনজীবী মোহাম্মদ বাদল মিয়া আদালতে বলেন, ‘সুব্রত বাইন মিডিয়ার সৃষ্টি। এই আসামিকে ভারতে তিনবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ৬ তারিখে নরসিংদীর ভুলতা ইউনিয়নে ফেলে রেখে চলে যায়। ওই সময় তিনি এত পরিমাণ ভয় পেয়েছেন। সুব্রত বাইন টোটালি ইনোসেন্ট। প্রয়োজনে তাদের কেন্দ্রীয় কারাগারে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা যেতে পারে।’

এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আদালতকে বলেন, ‘আসামিরা ধরা খাওয়ার ভয়ে মোবাইল ফোন ব্যবহার করত না। তারা স্যাটেলাইট ফোন ব্যবহার করত। সেটাই জব্দ করা হয়েছে।’ তখন কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় সুব্রত বাইন বলেন, ‘যেটা উদ্ধার হয়েছে আদালতে সেটা শো করেন। ওইটা চায়না ফোন। কোনো স্যাটেলাইট ফোন নয়। অস্ত্র উদ্ধারের কথা বলা হচ্ছে। অথচ এতগুলো মানুষের কাছ থেকে একটা মোবাইলও জব্দ হলো না।’ এর জবাবে আদালতের পুলিশ পরিদর্শক আসাদুজ্জামান বলেন, ‘তাদের কাছ থেকে স্যাটেলাইট ফোন উদ্ধার করা হয়েছে।’ তখন সুব্রত বাইন বলেন, ‘মোবাইলটা দেখান। চায়না ফোনকে স্যাটেলাইট ফোন বলছে। ওটা সিটিসেল মডেলের চায়না ফোন।’

শুনানি শেষে আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করে রিমান্ডের আদেশ দেন। রিমান্ড আদেশের পরে আদালতকে সুব্রত বাইন বলেন, ‘আমার নামাজ যেন কাজা না হয়। নামাজের ব্যবস্থা যেন থাকে।’ আদালত পুলিশকে বিষয়টি দেখতে বলেন। পরে সোয়া ৪টায় পুলিশ প্রহরায় তাদের হাজতখানায় নেওয়া হয়।

মঙ্গলবার ভোরে সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ অভিযানে কুষ্টিয়া জেলা থেকে তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী মোল্লা মাসুদকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় সুব্রত বাইনের দুই সহযোগী শুটার আরাফাত ও শরীফকে। গতকাল তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করা হয়।

Scroll to Top