লালমনিরহাট বিমানবন্দর ঘিরে আঞ্চলিক ভূরাজনীতিতে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে যে, বাংলাদেশের এই পুরনো বিমান ঘাঁটিটি চালু হলে এটি ভারতের জন্য একটি নতুন নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।
প্রভাবশালী ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে বাংলাদেশ চীনের সহায়তায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নির্মিত লালমনিরহাট বিমানবন্দরটি পুনরায় সক্রিয় করার পরিকল্পনা করছে। এই খবর প্রকাশ পাওয়ার সাথে সাথেই ভারতীয় প্রশাসন এবং নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা সতর্ক হয়ে গেছেন।
এই বিমানবন্দরটি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে। এবং এর পাশেই রয়েছে ভারতের চিকেন নেক – দেশের মূল ভূখণ্ড থেকে উত্তর-পূর্বের সাতটি রাজ্যে (সেভেন সিস্টার্স) পণ্য সরবরাহের একমাত্র প্রধান করিডোর। ফলস্বরূপ, লালমনিরহাটে চীনের সামরিক উপস্থিতি গড়ে উঠলে, এটি ভারতের জন্য বড় ধরনের কৌশলগত উদ্বেগ তৈরি করতে পারে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের মতে, চীন এই ঘাঁটিতে নজরদারি সরঞ্জাম, সামরিক ড্রোন, যুদ্ধবিমান এমনকি সামরিক সরঞ্জাম মোতায়েন করতে পারে বলে ভারতের ধারণা। এই সম্ভাব্য ঝুঁকি মোকাবেলায় ভারতও তাদের ত্রিপুরা রাজ্যের কৈলাশ শহরের পুরনো বিমানঘাঁটি পুনরায় চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। যদিও প্রাথমিকভাবে এটি বেসামরিক কার্যক্রমের জন্য চালু করা হবে, তবে এর অবকাঠামো এমনভাবে গড়া হবে যাতে সামরিক বিমান চলাচল ও জ্বালানি সরবরাহও সম্ভব হয়।
প্রতিবেদনে কৌশলগত পরিবর্তনের কারণ হিসেবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকেও তুলে ধরা হয়েছে। বলা হচ্ছে যে শেখ হাসিনা ভারতের ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিলেন। কিন্তু ছাত্র আন্দোলনের কারণে তার পতনের পর, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ভারতের প্রতি কম বন্ধুত্বপূর্ণ। এছাড়াও, ড. ইউনূস চীন ও পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক জোরদার করতে আগ্রহী বলে মন্তব্য করা হয়েছে।
২৬ মে ভারতের একটি প্রতিনিধি দল ত্রিপুরার কৈলাশ শহর বিমানঘাঁটি পরিদর্শন করে। তারা বিমানবন্দরের বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানিয়েছেন।
এই পুরো পরিস্থিতি ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে একটি নতুন কৌশলগত পর্যায়ে নিয়ে গেছে, যা ভবিষ্যতে দক্ষিণ এশিয়ার আকাশসীমায় প্রতিযোগিতা এবং উত্তেজনা বৃদ্ধি করতে পারে।