টাঙ্গাইলে ডামি নির্বাচন ও ভোট চুরির অভিযোগে শেখ হাসিনা, প্রাক্তন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল এবং স্থানীয় পাঁচ সাংবাদিকসহ ১৯৩ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করেছেন বাদী বিএনপি নেতা। এই মামলায় অজ্ঞাত ১৫০-২০০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছিল।
বুধবার (২১ মে) বাদী কামরুল হাসান মুখ্য বিচারিক হাকিম ভূঁইয়াপুর উপজেলা আমলী আদালতে মামলা প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করেন। রুমেলিয়া সিরাজাম মামলায় বাদী ও তার আইনজীবীর বক্তব্য শুনে আদালতের বিচারক মামলাটি খারিজের নির্দেশ দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে টাঙ্গাইল কোর্ট ইন্সপেক্টর মো. লুৎফর রহমান বলেন, “আদালতের বিচারক রুমেলিয়া সিরাজাম মামলায় বাদীর জবানবন্দি রেকর্ড করেছেন এবং বাদীর আইনজীবীর বক্তব্য শুনেছেন।এরপর আদালত নথিভুক্ত করার আদেশ দেন। আগামী ১৩ আগস্ট এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন আদালত।’
আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার ওই আদালতে মামলাটি দায়ের করা হয়েছিলো। মামলার বাদী কামরুল হাসান উপজেলার আলোয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি। মামলায় স্থানীয় পাঁচ সাংবাদিকের নাম আসামি হিসেবে উল্লেখ করে সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে, পরের দিন, মঙ্গলবার, দিনভর নানা নাটকীয়তার পর, মামলা থেকে পাঁচ সাংবাদিকের নাম বাদ দেওয়ার জন্য বাদী আদালতে একটি অনাপত্তিপত্র দাখিল করেন।
বাদীর আইনজীবী আবু রায়হান খান বলেন, ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ডামি ও ভোট চুরির নির্বাচন আখ্যা দিয়ে করা মামলাটি বাদী প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। ১৯ মে করা মামলায় তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট মোট ১৯৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন। বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে বাদীর জবানবন্দি নিয়ে ভূঞাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে আগামী ১৩ আগস্ট মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন আদালত। এরই মধ্যে গতকাল পাঁচ সাংবাদিককে মামলা থেকে প্রত্যাহারে বাদী অনাপত্তিপত্র দেন। সর্বশেষ আজ বাদী মামলাটি প্রত্যাহার করে নেন। বাদী কামরুল হাসান মামলাটি চালাবেন না বলে প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাদী কামরুল হাসান বলেন, উপজেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম মোস্তফা মামলা প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করেছেন। প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত বিএনপির ভেতর থেকেই নেওয়া হয়েছে।
ভূঁইয়াপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা বলেন, মামলাটি প্রত্যাহার করা হবে বলে তিনি শুনেছেন। তবে, বাদী এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফরহাদ ইকবাল বলেন, তিনি শুনেছেন যে ২০২৪ সালে ডামি নির্বাচন আয়োজন এবং ভোট চুরির অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে, কেউই এই ধরনের মামলা দায়েরের জন্য জেলা বিএনপির সাথে কোনওভাবে পরামর্শ করেননি। আবারও বলছি, প্রত্যাহারের বিষয়ে আমি কিছু জানি না।
ফরহাদ ইকবাল আরও বলেন, কেন মামলাটি দায়ের করা হয়েছে এবং কেন তা প্রত্যাহার করা হয়েছে তা জানতে জেলা বিএনপি কর্তৃক একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্ত প্রতিবেদনে প্রকৃত তথ্য জানার পর, বিএনপি হাইকমান্ডের সাথে পরামর্শ করে প্রয়োজনীয় সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জেলা বিএনপির সভাপতি হাসানুজ্জামিল শাহীন বলেন, এ ধরনের মামলা দায়েরের আগে জেলা বিএনপির সাথে পরামর্শ করা প্রয়োজন। জেলা বিএনপি বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
মামলার বাদী উল্লেখ করেছেন যে শেখ হাসিনা অন্যান্য আসামীদের সাথে যোগসাজশে ভারতের নির্দেশে ৭ জানুয়ারী, ২০২৪ তারিখে একটি ডামি নির্বাচন আয়োজন করেছিলেন। বাদী কামরুল হাসান ভূঁইয়াপুরের আলোয়া ইউনিয়নের ভারা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোটার ছিলেন। তিনি অন্যান্য ভোটারদের সাথে সেই কেন্দ্রে ভোট দিতে গেলে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা তাদের উপর হামলা চালায়। আসামীরা তাকে মারধর করে এবং হত্যার হুমকি দেয়। নির্বাচনের সময়, পুলিশ এবং প্রিজাইডিং অফিসারের সহায়তায় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা ভোটকেন্দ্র দখল করে নৌকা প্রতীকের বাক্স জোর করে সিল করে ভরে দেয়। এভাবে অন্যের ভোট চুরি করে টাঙ্গাইল-২ (ভূঁইয়ানপুর) আসন থেকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী তানভীর হাসান ছোট মনির এমপি নির্বাচিত হন।
