বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানিতে ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞা ব্যবসায়ীদের সমস্যায় ফেলেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন যে এই সিদ্ধান্ত কেবল বাংলাদেশকেই নয়, ভারতের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত ‘সেভেন সিস্টার্স’ অঞ্চলকেও প্রভাবিত করবে। বিশেষ করে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যে নির্ভরশীল আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয় ও মিজোরামের বাজারে দেখা দিচ্ছে অস্থিরতা।।
ভারত এই মাসের ১৭ তারিখ থেকে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশি পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করেছে। ফলস্বরূপ, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন বন্দর এলাকায় শত শত ট্রাক আটকে আছে। এর আগে, এপ্রিলের শুরুতে, ভারত তৃতীয় দেশে রপ্তানি পণ্যের জন্য বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধাও স্থগিত করেছিল। প্রতিক্রিয়ায়, বাংলাদেশও ভারতীয় সুতা আমদানি নিষিদ্ধ করেছিল।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম বলেন, “শেখ হাসিনার উৎখাতের পর, ভারতের মনোভাব আর বন্ধুত্বপূর্ণ নেই। এই ধরনের একগুঁয়ে সিদ্ধান্ত উভয় পক্ষের ক্ষতি করবে।”
বাংলাদেশ প্রতি বছর ভারত থেকে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি করে এবং মাত্র ১.৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করে। তবে, গত দশকে সেভেন সিস্টার্স অঞ্চলে বাংলাদেশি পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাবার, প্লাস্টিক পণ্য এবং আসবাবপত্রের চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রাণ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইলিয়াস মৃধা বলেন, “আমরা রপ্তানির কথা মাথায় রেখে সক্ষমতা তৈরি করেছি। ভারতে রপ্তানি বন্ধ হলে আমাদের উৎপাদন কমাতে হবে এবং অনেক শ্রমিকও বেকার হয়ে পড়বে।”
আরএফএল গ্রুপের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা সুমন কুমার লোহ বলেন, “ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের অনেক ব্যবসায়ী আমাদের ব্যবসার সাথে যুক্ত। তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থ এবং বাণিজ্য এখন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশেষ করে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য ও প্লাস্টিক পণ্য খাতে ক্ষতির ঝুঁকি বেশি। পাশাপাশি ভারতীয় ভোক্তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, কারণ বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক পণ্য অনুপস্থিত থাকলে স্থানীয় বাজারে সিন্ডিকেটের দাপট বাড়বে এবং পণ্যের দামও বৃদ্ধি পাবে।
ইলিয়াছ মৃধা বলেন, “নতুন বাজার খুঁজে পেলেও সেখানে পণ্য প্রতিষ্ঠা করতে বিজ্ঞাপন, মার্কেটিং, ডিস্ট্রিবিউশনসহ ব্যাপক খরচ করতে হয়।”
সুমন কুমার লোহ বলেন, “একই প্রোডাক্ট সব দেশে পাঠানো যায় না। ইন্ডিয়াতে যে পণ্য জনপ্রিয়, তা ইউরোপ বা গালফে একইভাবে গ্রাহক পাবে না।”
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দুই দেশের স্বার্থ বিবেচনায় এমন পাল্টাপাল্টি অশুল্ক বাধা থেকে সরে আসা জরুরি। শত্রুতা নয়, সম্পর্ক মজবুত করাই হবে টেকসই অর্থনীতির ভিত্তি।
অধ্যাপক মঈনুল ইসলাম বলেন, “আমরা চাই সুসম্পর্ক বজায় থাকুক। ভারত যদি তা না চায়, সেটি তাদের বিষয়। তবে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক দুই পক্ষেরই মঙ্গল বয়ে আনবে।”
ইপিবি’র তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে ভারতে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হয়েছে:
পোশাক: ৫৫ কোটি ডলার
প্রক্রিয়াজাত খাদ্য: ১৬ কোটি ডলার
প্লাস্টিক পণ্য: ৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার
তুলা ও তুলা সুতার ঝুট: ৩ কোটি ১৩ লাখ ডলার
আসবাবপত্র: ৬৫ লাখ ডলার
এ পণ্যের অধিকাংশই স্থলবন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়। ফলে চলমান নিষেধাজ্ঞা শুধু কূটনৈতিক সম্পর্ক নয়, আঘাত করছে দক্ষিণ এশিয়ার আন্তঃনির্ভরশীল অর্থনীতিকেও।