যা টাকা লাগে দেব, সবাই মিলে বন্দর অচল করে দেব: গোপন ষড়যন্ত্র ফাঁস

চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে ষড়যন্ত্রমূলক আলোচনার একটি গোপন হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট ফাঁস হওয়ার পর প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়েছে। একটি গোপন গ্রুপে বন্দর অচল করে দেওয়ার হুমকি, বিদেশি অপারেটর আনার বিরোধিতা, এবং রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের আলোচনা নিয়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। এসব তথ্য সামনে আনেন নৌ পরিবহন উপদেষ্টা।

ঘটনাটি ঘটে ১৪ মে চট্টগ্রাম বন্দরের একটি গুরুত্বপূর্ণ সভায়। সভায় অংশগ্রহণের সময় নৌপরিবহন উপদেষ্টা সকলের সামনে “বন্দর সুরক্ষা আন্দোলন” হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের চ্যাট কথোপকথনটি পড়ে শোনান। এতে বিদেশী কন্টেইনার হ্যান্ডলিং অপারেটর আনার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং রাজনৈতিক নেতাদের একটি দলের আপত্তির তথ্য প্রকাশিত হয়।

ভিডিও ক্লিপে দেখা যাচ্ছে যে কথিত আলোচনায় একজন সদস্য বন্দর বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। তিনি বলেন, “যা টাকা লাগে দেব, আমার কোনো আপত্তি নেই। যা করার করেন, সবাই মিলে বন্দর অচল করে দেব।” ওই আলোচনায় বিএনপি নেতা নাজিমুর রহমান এবং সাইফ পাওয়ারটেকের মালিক রুহুল আমিন তরফদারের নাম উঠে আসে। স্থানীয় রাজনীতিক নাসিরের নামও উচ্চারিত হয়।

কথোপকথনে আরও দেখা যায় যে সকলের সাথে একটি জরুরি বৈঠকের নির্দেশ দেওয়া হয় এবং প্রচারণা চালাতে বলা হয় যে বিদেশি কোম্পানি এলে স্থানীয়দের চাকরি হারাতে হবে—তাই বন্দর অচল করে দেওয়া হবে। “ইউসুফ, তুমি আজকে সবাইকে নিয়ে মিটিং করবে,” — এমন নির্দেশনাও ছিল ওই চ্যাটে।

বিষয়টি নিশ্চিত করতে নগর বিএনপির সদস্য সচিব নাজিমুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, “উপদেষ্টা যেটা বলেছেন, সেটা উনিই ভালো বলতে পারবেন। এটা কোন নাজিমের কথা বলছেন, আমি বুঝতে পারছি না।” বিষয়টিকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বলছেন রুহুল আমিন তরফদার। তার ভাষায়, “লোকগুলোকে আমি চিনি না। গত ছয় মাসেও কারও সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি। ফ্যাব্রিকেট করে আমাকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে।”

বন্দর কর্তৃপক্ষ এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু ঘোষণা করেনি। তবে বন্দরের কেউ এ বিষয়ে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে দেশের অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখতে এবং বিশ্বমানের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষতা বৃদ্ধি করা ছাড়া আর কোনও বিকল্প নেই। দেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রায় ৮৫% আসে এই বন্দর-নির্ভর খাত থেকে, যা এখন চীন এবং ভিয়েতনামের মতো দেশের সাথে প্রতিযোগিতা করছে।

নৌ পরিবহন উপদেষ্টার ভাষায়, “আমি যদি একজন বিশ্বমানের অপারেটর আনতে চাই, আর তাতে যদি আপত্তি করা হয়, তাহলে এই বন্দর কখনওই বিশ্বমানের হবে না।”

উল্লেখ্য , বৈঠকটি অভ্যন্তরীণ ছিল এবং কোনও গণমাধ্যম কর্মীকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি। তবে, ফাঁস হওয়া ভিডিও এবং কথোপকথন এখন সোশ্যাল মিডিয়াতেও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

Scroll to Top