আওয়ামী লীগের টাকায় বিএনপির রাজনীতি চলে, বিস্ফোরক অভিযোগ হাসনাত আব্দুল্লাহর

‘বিএনপির রাজনীতি চলে আওয়ামী লীগের টাকায়’ মন্তব্য করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “আমরা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা আনতে সক্ষম হয়েছি, কিন্তু তাদের অর্থনৈতিক কাঠামো এখনও আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। কুমিল্লায় অনেক উপজেলার আওয়ামী লীগের রাজনীতি যেমন আওয়ামীলীগের টাকায় চলে, তেমনি বিএনপির রাজনীতিও আওয়ামী লীগের টাকায় চলে।

গত শুক্রবার (১৬ মে) সন্ধ্যায় কুমিল্লায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহীদ, আহত ও বীর সন্তানদের সম্মান জানাতে আয়োজিত জুলাই সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

হাসনাত বলেন, “যাঁরা বিএনপির নেতৃস্থানীয় অবস্থানে রয়েছেন, তাঁরা আমাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে না দেখে সহযোগী হিসেবে ভাবুন। আমি যে কথা বলছি, তা আপনাদের মঙ্গলের জন্যই বলছি। এই অঞ্চলের অনেক এলাকায় সব রাজনৈতিক দলই এখন আওয়ামী লীগের টাকার ছায়ায় চলছে।”

তিনি আরও বলেন, “আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের প্রতি আমার প্রশ্ন—যাঁরা হত্যার সঙ্গে জড়িত, তারা কীভাবে জামিন পায়? কোন বিচারক এ ধরনের সিদ্ধান্ত দেন? এসব জামিনের পেছনে কোন প্রভাবশালী শক্তি কাজ করছে, আপনি জাতির সামনে সেই তথ্য আনুন।”

হাসনাত আরও বলেন, “আপনি বারবার বলছেন যে, আপনাকে আটকে দেওয়া হচ্ছে, কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। যদি এমনটা হয়ে থাকে, তাহলে সরাসরি জাতির সামনে তুলে ধরুন।”

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “যেসব অপরাধী জামিনে ছাড়া পেয়ে শহীদদের বাড়ির আশেপাশে ঘুরছে, সেটি যেমন আমাদের ব্যর্থতা, তেমনি আসিফ নজরুল স্যারের ব্যর্থতাও। আপনি তো বলেছিলেন, জানুয়ারিতেই দ্বিতীয় ট্রাইবুনাল গঠিত হবে। এখন মে মাস চলছে, এখনও কিছুই হয়নি কেন?”

হাসনাত বলেন, “যদি এই অন্তর্বর্তী সরকার মনে করে যে খুনিদের বিচার কিংবা আওয়ামী লীগের বিচার অপেক্ষাকৃত গৌণ কিছু, তাহলে সেটি হবে ভয়াবহ ভুল। খুনিদের বিচারের মাধ্যমেই সংস্কার শুরু হওয়া উচিত।”

তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা চাই, বিচার এবং সংস্কার উভয়ই হোক। সেই ধারাবাহিকতার মধ্য দিয়েই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক।”

মানবিক করিডোর ইস্যুতে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা চাই না, কোনো অজানা ও অস্পষ্ট নীতির মাঝে দেশ পরিচালিত হোক। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব কোনো পরাশক্তির হাতে তুলে দেওয়া হবে না।”

তিনি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেন, “ভারত, পিন্ডি বা যুক্তরাষ্ট্র—কারোর আধিপত্য এখানে চলবে না। বাংলাদেশকে কোনো বৈদেশিক শক্তির ছায়ায় পরিচালিত হতে দেব না।”

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের ভবিষ্যৎ বিষয়ে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন হাসনাত। তিনি বলেন, “১৪ দল নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা কী? সেটা জনগণকে জানাতে হবে। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন করতে চাই, তবে এখন পর্যন্ত আমরা হতাশ। আহতদের পুনর্বাসন হয়নি, কর্মসংস্থান হয়নি, বিচার এগোয়নি। আমরা রাস্তায় নামার পরেই কেবল নড়াচড়া দেখা গেছে।”

জুলাই সমাবেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন, যারা ফ্যাসিবাদ বিরোধী রাজনীতির পক্ষে। আয়োজক ছিল কুমিল্লা জেলা ও মহানগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ফেস দ্য পিপলের সম্পাদক সাইফুর রহমান সাগর, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আশিকুর রহমান ওয়াসিম, সচেতন রাজনৈতিক ফোরামের প্রধান সমন্বয়ক ড. শাহ মো. সেলিম, এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব রিফাত রশিদ, মুখ্য সমন্বয়ক নাভিদ নওরোজ শাহ, এবি পার্টির জিএম গোলাম সামদানীসহ আরও অনেকে। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন কুমিল্লা মহানগরের মুখ্য সংগঠক আরাফ ভূঁইয়া।

Scroll to Top