দেশজুড়ে আলোড়ন তোলা আছিয়া হ*ত্যা মামলার চাঞ্চল্যকর রায়

মাগুরার শিশু আসিয়ার চাঞ্চল্যকর ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় আদালত রায় দিয়েছে। বিচারক এই মামলার প্রধান আসামি হিটু শেখকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। এছাড়াও বাকি তিন আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে।

শনিবার (১৭ মে) মাগুরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসান মামলার রায় ঘোষণা করেন।

আলোচনা করা এই মামলার বিচার চার্জ দাখিল বা বিচার শুরুর ২১ দিন পর শেষ হয়। ঘটনার মাত্র দুই মাস ১১ দিন পর মামলার রায় দেওয়া হয়।

এর আগে, মঙ্গলবার (১৩ মে) সকাল ১১টার দিকে মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের পর রায়ের তারিখ নির্ধারণ করেন মাগুরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসান।

মাগুরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি মনিরুল ইসলাম মুকুল ওই দিন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে, মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ ৭ মে শেষ হয়েছিল। ওই দিন শিশুটির ময়নাতদন্তের দায়িত্বে থাকা দুই চিকিৎসক ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেন।

মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার জারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী আছিয়া ১৩ মার্চ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। এর আগে, ৬ মার্চ মাগুরা শহরের নিজনান্দুয়ালী গ্রামে তার বোনের শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার সময় শিশুটিকে ধর্ষণ করা হয়। ঘটনার পর তাকে প্রথমে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে এবং পরে ফরিদপুর ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নেওয়া হয়।

শিশুটির মা আয়েশা আক্তার ৮ মার্চ মাগুরা সদর থানায় শিশুটির বোনের শ্বশুর হিতু শেখ, শাশুড়ি জাহেদা বেগম, শ্যালিকা সজিব শেখ এবং সজিবের বড় ভাই রাতুল শেখকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করেন। মামলার চার আসামিই পুলিশ হেফাজতে আছেন। তাদের উপস্থিতিতে বিচারিক কার্যক্রম চলছে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হলেন মাগুরা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আলাউদ্দিন ১৩ এপ্রিল আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন এবং ২০ এপ্রিল মাগুরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসান মামলাটি আমলে নিয়ে ২৩ এপ্রিল অভিযোগ গঠনের তারিখ নির্ধারণ করেন। অভিযোগ গঠনের পর, ২৭ এপ্রিল মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় এবং ৭ মে বুধবার ঢাকা মেডিকেল কলেজের দুই চিকিৎসকের সাক্ষ্যগ্রহণের মাধ্যমে তা শেষ হয়।

এদিকে, মামলার বিচার চলাকালীন, প্রধান আসামি হিটু শেখ আদালতে আসা-যাওয়ার পথে উপস্থিত সাংবাদিকদের দেখে প্রতিদিন নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন এবং শিশুটির বোন হামিদাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের দাবি জানান। তবে, ১৫ মার্চ তিনি আদালতে স্বীকার করেন যে তিনিই এই ঘটনায় একমাত্র জড়িত।

এর আগে, ৬ মার্চ শিশু ধর্ষণের খবর ছড়িয়ে পড়লে মাগুরাসহ সারা দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। সমাজের সর্বস্তরের মানুষ রাস্তা অবরোধ করে, থানা ও আদালত ঘেরাও করে অল্প সময়ের মধ্যে দোষীদের শাস্তির দাবি জানান। স্থানীয় আইনজীবীরাও এই ঘটনায় অভিযুক্তদের ন্যায়বিচার দাবি করার পাশাপাশি অভিযুক্তদের কোনও আইনি সহায়তা না দেওয়ার ঘোষণা দেন।

সরকার মামলাটিকে আরও গুরুত্ব দেয় এবং মাগুরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে কর্মরত সরকারি আইনজীবীকে সহায়তা করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিযুক্ত বিশেষ প্রসিকিউটর উপদেষ্টা (অ্যাটর্নি জেনারেল পদমর্যাদার) অ্যাডভোকেট এহসানুল হক সমাজিকে দায়িত্ব দেয়। একই সময়ে, মামলার কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার জন্য আইনি সহায়তার মাধ্যমে অভিযুক্তদের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য সোহেল আহমেদ নামে একজন আইনজীবীকে নিযুক্ত করা হয়।

Scroll to Top