বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ফারাক্কা বাঁধ এখন বাংলাদেশের জন্য এক মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। ঐতিহাসিক ‘ফারাক্কা দিবস’ উপলক্ষে বুধবার (১৫ মে) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এই মন্তব্য করেন।
বিবৃতিতে ফখরুল বলেন, “১৬ মে ‘ফারাক্কা দিবস’ আমাদের জাতীয় আন্দোলনের এক তাৎপর্যপূর্ণ অধ্যায়। ৪৯ বছর আগে এই দিনে মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে লাখো জনতা ফারাক্কা অভিমুখে লংমার্চে অংশ নেয়। ভারতের ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে গঙ্গা নদীর পানি একতরফাভাবে প্রত্যাহার করে নেওয়ার প্রতিবাদেই এই লংমার্চ হয়েছিল।”
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ওই এলাকায় পানিসহ নানাবিধ প্রাকৃতিক ভারসাম্যহীনতা তীব্র আকার ধারণ করেছে। জীববৈচিত্র ও পরিবেশগত মানকে বিবেচনা না করে এবং প্রাকৃতিক ও মানবিক বিপর্যয়ের সম্ভাবনাকে উপেক্ষা করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের মতামতকে অগ্রাহ্য করে ভারতকে কয়েক দিনের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে ফারাক্কা বাঁধ চালুর অনুমতি দেয়। কিন্তু সেই বাঁধ অব্যাহতভাবে এখনও পর্যন্ত চালু থাকায় সেটি এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। তৎকালীন আওয়ামী সরকারের কারণে এ দেশের জনগণ পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত। এ বঞ্চনা ও দেশের প্রকৃতিক বিপর্যয়ে জনদুর্দশার আশংকায় বিজ্ঞ ও দুরদর্শী মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানী জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ফারাক্কা অভিমুখে ঐতিহাসিক মিছিল করে ভারত সরকারের নিকট প্রতিবাদ করেন এবং বিষয়টি বিশ্ব সম্প্রদায়ের নজরে আনেন। তখন থেকে ব্যাপক মানববিপর্যয় সৃষ্টিকারী ফারাক্কা বাঁধের বিষয়টি আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ব্যাপকভাবে আলোচিত হতে থাকে।
ফখরুল আরও বলেন, “ভারত আন্তর্জাতিক আইন ও চুক্তির তোয়াক্কা না করে বাংলাদেশগামী ৫৪টি অভিন্ন নদীর উপর একের পর এক বাঁধ নির্মাণ করছে। এর ফলে দেশের নদীগুলোর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং বাংলাদেশের ভৌগোলিক ও পরিবেশগত অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ছে।”
বিএনপি মহাসচিব মনে করেন, ফারাক্কা দিবসের গুরুত্ব আজও প্রাসঙ্গিক। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের নদীসমূহে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত করতে হলে আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টা বাড়াতে হবে। নতুবা বাংলাদেশ ধীরে ধীরে নিষ্ফলা ও উষর ভূমিতে পরিণত হবে।”
তিনি মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, “তার দূরদর্শিতা ও সাহসী উদ্যোগের কারণেই ফারাক্কা ইস্যুটি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আলোচিত হয় এবং আজও তা আন্দোলনের প্রতীক হয়ে আছে।”