রাজনীতি থেকে বিদায় নিচ্ছে আওয়ামী লীগ? ইতিহাস বলছে কিছু ভয়াবহ সত্য

অন্তর্বর্তী সরকার গতকাল শনিবার আওয়ামী লীগের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে। এর আগে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে কোনো দলকে নিষিদ্ধ না করে শুধুমাত্র কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার ঘটনা এটাই প্রথম।

১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ, মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে দখলদার পাকিস্তানি সরকার আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। স্বাধীনতার পর শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগের তিনটি অংশ, পিডিপি এবং স্বাধীনতাবিরোধী সব ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

১৯৭৫ সালের ২৫শে জানুয়ারি শেখ মুজিব সকল রাজনৈতিক দল, যার মধ্যে আওয়ামী লীগও ছিল, বিলুপ্ত ঘোষণা করে একদলীয় শাসন চালু করেন এবং গঠন করেন বাকশাল।

১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর সামরিক শাসনের আওতায় বাকশালসহ সকল রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়।

রাষ্ট্রপতি আবু সাদাত মো. সায়েম ১৯৭৬ সালে রাজনৈতিক কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন। এই সময়ে জোহরা তাজউদ্দীনসহ আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা বাকশাল ত্যাগ করে পুনরায় আওয়ামী লীগকে সক্রিয় করেন। তবে নেতৃত্বের দ্বন্দ্বের কারণে আওয়ামী লীগ (মালেক) ও আওয়ামী লীগ (মিজান) নামে দলটি দুটি ভাগে বিভক্ত হয়। পরে শেখ হাসিনা নেতৃত্বে আসার পর আওয়ামী লীগ বিলুপ্ত করে আবদুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে আবার বাকশাল গঠন করা হয়।

এর আগে, ১৯৭৯ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে জামায়াতসহ সব নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দলকে রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ দেওয়া হয়। তবে ওই বছর তারা নির্বাচনী রাজনীতিতে ফিরতে পারেনি। জামায়াত নেতারা ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ (IDL) নামক একটি দলের প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেন।

২০১৩ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে উচ্চ আদালত জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে। গত বছর আওয়ামী লীগ সরকার জামায়াত ও ছাত্রশিবিরকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর জুলাই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় গঠিত ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অস্থায়ী সরকার গত আগস্টে এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে।

বিশেষ ক্ষমতা আইনে ১৯৭৪ সালে পূর্ববাংলা সর্বহারা পার্টি (PBSP) এবং পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টিকে (PBCP) নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। দুটি বামপন্থী মাওবাদী সংগঠন এখনও নিষিদ্ধ অবস্থায় রয়েছে।

এছাড়া, ২০০৫ সালে সারাদেশব্যাপী বোমা হামলার পর জামাআতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (JMB)-কে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ করা হয়। ২০০৯ সালে হিযবুত তাহরীরকেও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। সর্বশেষ গত বছরের ২৩শে অক্টোবর ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ করা হয়।

উল্লেখ্য, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধের ঘটনা যেন পূর্বের অনেক নিষেধাজ্ঞা ও রাজনৈতিক নাটকের পুনরাবৃত্তি। ইতিহাস বলছে—কোনো দলই চিরকাল টিকে থাকে না, যদি না তারা জনআস্থার ভিত্তিতে নিজেদের পুনর্গঠন করতে পারে। আওয়ামী লীগ কি তবে নিজ হাতে নিজের পতনের ঘণ্টা বাজাচ্ছে, নাকি এটি একটি নতুন রূপে ফিরে আসার আগমনী বার্তা? সময়ই দেবে সেই প্রশ্নের উত্তর। তবে ইতিহাসে যারা আত্মসমালোচনা ও সংস্কারে ব্যর্থ, তাদের স্থান শেষমেশ প্রান্তিকেই হয়।

Scroll to Top