বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেছেন, ইসলামে সন্ত্রাসবাদের কোনো স্থান নেই। ইসলাম সন্ত্রাসে বিশ্বাস করে না। আমরা পাঁচ দফা প্রস্তাব দিয়েছি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আমরা আপসহীন থাকবো।
শনিবার (১০ মে) দুপুরে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন শহীদ আব্দুস সামাদ স্মৃতি ময়দানে কালিগঞ্জ উপজেলা জামায়াত শাখার কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা জামায়াতের আমির ও সম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল ওহাব সিদ্দিকী।
ডা. তাহের বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ ভারতীয় আধিপত্যকে ভয় পায় না। ভারত যদি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে, আমরা সেই ক্ষেপণাস্ত্রই ভারতে পাঠাব। আমরা জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করবো। মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে। নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনে আমরা সংস্কার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা পরীক্ষিতভাবে সৎ। আমরা সৎ মানুষের শাসন চাই, কোরআনের আইন চাই। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত।”
জামায়াতের এই শীর্ষ নেতা বলেন, “আমাদের অঙ্গীকার হবে একটি উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা। চাল, কাপড়, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা সবার জন্য নিশ্চিত করা হবে। প্রত্যেকেই বসবাসের জন্য ঘর পাবে। বিনামূল্যে শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা হবে। আমরা আওয়ামী লীগের শাসন দেখেছি, বিএনপির শাসন দেখেছি, জাতীয় পার্টির শাসন দেখেছি। এখন আর একটিই দল বাকি আছে। সেই দলের নাম বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি। আমাদের ভোট দিন, আমাদের নির্বাচিত করুন, আমরা আপনাদের অধিকার ফিরিয়ে দেব। আমরা এ দেশে সব ধর্মের মানুষের জন্য সমান অধিকার নিশ্চিত করবো। নারীদের মর্যাদা আমরা বৃদ্ধি করবো।”
রাসুলুল্লাহ হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর হাদিস উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ইসলামে কোনো নারীকে হত্যা করা যাবে না।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা সোনার বাংলার স্লোগান শুনেছি, আমরা ছয় দফার স্লোগান শুনেছি। কিন্তু সোনার বাংলার স্লোগান এই দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারেনি।”
প্রধান অতিথি বলেন, ‘দরকার হলে পাঁচ বছরের জন্য জামায়াতের কাছে বাংলাদেশকে লিজ দিন। আমরা যদি ব্যর্থ হই, তাহলে কান ধরে, ধাক্কা দিয়ে বের করে দেবেন। আমরা ব্যর্থ হবো না- ইনশাআল্লাহ।
তিনি একটি উদাহরণ দিয়ে বলেন, “যখন আমরা লুটপাট ও চাঁদাবাজির কথা বলি, তখন একটি বড় গোষ্ঠী মাথায় হাত দেয়। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের নেতাকর্মীরা লুটপাট, দুর্নীতি, দমন-পীড়ন, গুম, খুন ও দুঃশাসন করে এই দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। এখন আরেকটি গোষ্ঠী একইভাবে লুটপাট, চাঁদাবাজি ও দখল শুরু করেছে। আমাদের তাদের বিরুদ্ধে সজাগ থাকতে হবে।”
প্রধান অতিথি সাতক্ষীরা জেলার প্রতিটি সংসদীয় আসনের নেতাকর্মীদের নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের আহ্বান জানান।
কালিগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আবদুর রউফ এবং সরকার সেক্রেটারি মাওলানা আনোয়ারুল ইসলামের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত কর্মী সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন— কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা অঞ্চল সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, জেলা জামায়াতের সাবেক আমির, কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য হাফেজ মাওলানা মুহাদ্দিস রবিউল বাশার, জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম মুকুল, জেলা জামায়াতের কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য ও সেক্রেটারি মাওলানা আজিজুর রহমান, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য ও সাবেক এমপি গাজী নাজরুল ইসলাম, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মাস্টার শফিকুল আলম, জেলা ছাত্রশিবির নেতা ইমামুল ইসলাম, জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি ওমর ফারুক, সহকারী সেক্রেটারি মাহবুবুল আলম, অফিস সেক্রেটারি মাওলানা রুহুল আমিন, কালিগঞ্জ উপজেলার জামায়াতের সাবেক আমির জিএম আবদুল গফফার, শ্যামনগর উপজেলার আমির মাওলানা আবদুর রহমান, আশাশুনি উপজেলার আমির আবু মুসা তারিকুজ্জামান তুষার, দেবহাটা উপজেলার আমির মাওলানা ওলিউল ইসলাম, শহীদ আরিফুজ্জামানের পিতা আফতাবুজ্জামান, সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রশিবির সেক্রেটারি এসএম জোবায়ের হোসেন, সাতক্ষীরা শহর ছাত্রশিবির সেক্রেটারি মেহেদী হাসান, জেলা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আজিজুল ইসলাম প্রমুখ।
এর আগে সকালেই একই ময়দানে জামায়াতে ইসলামীর নারী কর্মীদের একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। প্রচণ্ড গরম উপেক্ষা করে হাজার হাজার মানুষ স্লোগানে স্লোগানে সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন।