ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর পাকিস্তান ও ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের (এনএসএ) মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ হয়েছে। দুই দেশের মধ্যকার সাম্প্রতিক উত্তেজনা নিরসনের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও আইএসআই প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আসিম ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গে কথা বলেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক ডার। তিনি বলেন, “হ্যাঁ, পাকিস্তান ও ভারতের এনএসএরা একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।” তবে আলোচনার বিস্তারিত তিনি জানাননি।
সূত্রমতে, এই যোগাযোগের পেছনে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মার্কো রুবিওও পাকিস্তান ও ভারতের এনএসএদের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলেছেন।
ভারতের হামলার পর পাকিস্তান দ্রুত এবং কৌশলী প্রতিক্রিয়া দেখায়। পাকিস্তানের দাবি, তারা পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে, যার মধ্যে আধুনিক ফোর পয়েন্ট ফাইভ জেনারেশনের ফ্রান্সের তৈরি রাফাল যুদ্ধবিমানও রয়েছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী বলেন, “আমরা চাইলে ১০টি ভারতীয় জেট গুলি করে নামাতে পারতাম, কিন্তু সংযম দেখানো হয়েছে।”
ভারতের গণমাধ্যম এই ক্ষতির বিষয়ে তেমন কিছু জানায়নি। এমনকি ‘দ্য হিন্দু’ প্রাথমিকভাবে তিনটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হওয়ার খবর দিলেও পরে তা প্রত্যাহার করে। একজন মার্কিন বিশ্লেষক সিএনএন-এ বলেন, “যদি রাফাল গুলি করে নামানো হয়ে থাকে, তাহলে তা ভারতের জন্য বড় ধাক্কা।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সংঘর্ষ চীনা ও পশ্চিমা প্রযুক্তির সরাসরি পরীক্ষার মঞ্চে পরিণত হয়েছে। পাকিস্তান সম্প্রতি চীনের তৈরি জে-১০সি (J-10C) যুদ্ধবিমান যুক্ত করেছে, যা ভারতের রাফালের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখা হয়। এক ফরাসি গোয়েন্দা কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন, এটিই প্রথমবারের মতো কোনো রাফাল যুদ্ধবিমান যুদ্ধক্ষেত্রে গুলি করে নামানো হয়েছে।
একজন মার্কিন বিশ্লেষকের ভাষায়, “এটি একটি বড় অগ্রগতি এবং প্রমাণ করে যে চীনা প্রযুক্তি এখন বিশ্বমানের।”
২০১৯ সালের বালাকোট হামলার সময় পাকিস্তান আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিল এবং প্রতিক্রিয়া জানাতে এক দিন সময় লেগেছিল। কিন্তু এবার পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া তাৎক্ষণিক ও সুসংগঠিত ছিল। সরকারের সঙ্গে সেনাবাহিনীর আগাম নির্দেশনা ছিল—যদি ভারত হামলা করে, তাহলে প্রতিক্রিয়া হবে ‘কুইড প্রো কিউ প্লাস’ নীতির ভিত্তিতে—অর্থাৎ, সমান নয়, অতিরিক্ত।
বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তান ও ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের সরাসরি যোগাযোগ এবং পাকিস্তান কর্তৃক রাফাল গুলি করে নামানোর দাবি দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলগত স্থিতিশীলতার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। একইসঙ্গে, চীনা সামরিক প্রযুক্তির বিকাশ এই অঞ্চলে সামরিক ভারসাম্যের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।