প্রায় ৫০,০০০ বাংলাদেশি শ্রমিক ইউরোপে বৈধভাবে একটি ভালো জীবনের আশায় ইতালির ভিসার জন্য অপেক্ষা করছেন। এই বহু প্রতীক্ষিত অভিবাসীদের ভাগ্য নির্ধারিত হতে পারে সোমবার (৫ মে) থেকে, কারণ ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তেও পিয়ান্তেদোসি একটি দুইদিনের সফরে ঢাকায় আসছেন। এ সফরের সময় তিনি বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ভিসা জটিলতা ও বৈধ অভিবাসন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশি শ্রমিকরা ইতালিতে বৈধভাবে যাওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে অর্থ ব্যয় করেছেন। তবে দালাল ও মধ্যস্থতাকারীদের কারণে অনেকেই ভিসা প্রক্রিয়ায় ভুল তথ্য দিয়েছেন, যা ভিসা জটিলতার অন্যতম কারণ। অনেকেই মাসের পর মাস পাসপোর্ট জমা দিলেও কোনো আপডেট পাননি। এই পরিস্থিতিতে ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরকে তারা আশার আলো হিসেবে দেখছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ঢাকায় ইতালিয়ান দূতাবাসে প্রায় এক লক্ষ আবেদনকারীর পাসপোর্ট আটকে ছিল, যা এখন অর্ধেকে নেমে এসেছে, প্রায় ৫০,০০০-এ। দূতাবাস জানিয়েছে, অনেকে ভুয়া ‘নুল্লা অস্তা’ (ওয়ার্ক পারমিট) দিয়ে আবেদন করেছেন, যা যাচাই ও বাছাই প্রক্রিয়ায় জটিলতা সৃষ্টি করেছে।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ইতালির সঙ্গে ভিসা ইস্যু নিয়ে নিয়মিত আলোচনা করে আসছে। এবারের সফরে ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ড. আসিফ নজরুলের সঙ্গে বৈঠক করবেন। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
জানা গেছে, সফরে দুই দেশের মধ্যে নিয়মিত অভিবাসন ব্যবস্থাপনা, অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো এবং তা প্রতিরোধ নিয়েও আলোচনা হবে।
ভিসা আবেদনের প্রক্রিয়ায় যুক্ত প্রতিষ্ঠান ভিএফএস গ্লোবাল এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, যাদের বৈধ ‘নুল্লা অস্তা’ রয়েছে, তাদেরকে ইমেইলের মাধ্যমে অ্যাপয়েন্টমেন্ট জানানো হচ্ছে। তারা জানিয়েছে, সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি আর্থিক লেনদেন ছাড়াই সম্পন্ন হচ্ছে এবং অন্য কোনোভাবে অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়ার সুযোগ নেই।
ভিএফএস আরও জানিয়েছে, যারা ভুয়া কাগজপত্র জমা দিয়েছেন, তাদের আবেদন বাতিল করা হয়েছে এবং পাসপোর্ট ফেরত দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি আবেদনকারীদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছে এবং প্রতারকদের খপ্পরে না পড়ার অনুরোধ করেছে।
দুই বছর আগে ইতালি ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের দেশগুলো থেকে প্রায় ৬ লক্ষ শ্রমিক নিয়োগ দেওয়ার ঘোষণা দেয়। সেই ঘোষণার পর নিয়োগকারীরা ‘নুল্লা অস্তা’ চেয়েছিলেন, কিন্তু বাংলাদেশি শ্রমিকদের ভিসা প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। দুঃখজনকভাবে, ২০২৪ সালের জন্য ইতালির স্পন্সরকৃত ভিসার তালিকায় বাংলাদেশ নেই।
এদিকে ইতালির নতুন অভিবাসন নীতির আওতায় অবৈধ বাংলাদেশিদের আলবানিয়ার মাধ্যমে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। এখনো ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে অবৈধভাবে ইতালি প্রবেশের প্রবণতা অব্যাহত আছে, এবং এই বিপজ্জনক পথে অনেক বাংলাদেশি প্রাণ হারাচ্ছেন।
প্রবাসী বাংলাদেশি ও ভিসা আবেদনকারীরা আশাবাদী যে, ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের সময় এই সংকট নিরসনে কার্যকর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সরকারও এ বিষয়ে ইতালির সদয় মনোভাব প্রত্যাশা করছে। অনেকেই বলছেন, যদি সময়মতো শ্রমিক না পাঠানো যায়, তাহলে ইতালির শ্রমবাজারে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুন্ন হতে পারে।