ইউরোপীয় ইউনিয়ন (EU), ২৭ জাতির এই জোট, বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে “যথাযথ” সংস্কারের জন্য পর্যাপ্ত সময় দেওয়ার পক্ষে রয়েছে। ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি মাইকেল মিলার এ তথ্য জানান। সোমবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ডিক্যাব টকে (ডিক্যাব টক) কূটনৈতিক সংবাদদাতাদের সংগঠন ডিক্যাবের সঙ্গে আলোচনায় তিনি জুলাই-আগস্টে ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ড, দোষীদের বিচারের অগ্রগতি, ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান জরুরি সরকারের সংস্কার প্রচেষ্টা এবং আসন্ন নির্বাচনসহ বিভিন্ন সমসাময়িক ইস্যু নিয়ে কথা বলেন।
বাংলাদেশে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন কবে অনুষ্ঠিত হবে? ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রত্যাশা কী? নির্বাচন কমিশন, সরকার ও অন্যান্য অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে EU কী উপলব্ধি করেছে?
এই প্রশ্নগুলোর সম্মিলিত জবাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত বলেন,
“বাংলাদেশে কখন নির্বাচন হবে, সে সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ নিজেই নেবে। তবে তার আগে চলমান সংস্কার প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হওয়া উচিত, কারণ এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ড. ইউনুসের নেতৃত্বে সরকার যে সংস্কার করছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন সে প্রচেষ্টার প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছে।”
মাইকেল মিলার বলেন, “রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদলানোর পর এখন সংস্কারের জন্য এক বিরাট সুযোগ তৈরি হয়েছে। এই সুযোগটি কাজে লাগানো উচিত।” তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “আমরা নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের ওপর কোনো চাপ দিচ্ছি না।” তিনি আরও আশা প্রকাশ করেন, ড. ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলো মিলেই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্মাণে চলমান সংস্কার প্রক্রিয়া সফলভাবে শেষ করবে। পাশাপাশি, জুলাই-আগস্টের হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচার স্বচ্ছভাবে এবং দ্রুত সম্পন্ন হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এক প্রশ্নের উত্তরে মাইকেল মিলার বলেন, “ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশে একটি মুক্ত, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায় এবং সে নির্বাচনকে সমর্থন দিতেই আমরা আগ্রহী।”
রাখাইনের মানবিক করিডোর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এই উদ্যোগটি ইতিবাচক। দুই পক্ষের ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য মানবিক সহায়তা প্রয়োজন। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে, সবাই যেন সমানভাবে সহায়তা পায়।”
বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, “বর্তমান সরকার যদি ইউরোপে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে চায়, তবে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে যথাযথ তথ্য ও প্রমাণসহ যোগাযোগ করতে হবে। এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে তিন থেকে চার বছর সময় লাগতে পারে।”
জামায়াতে ইসলামীর আমির ড. শফিকুর রহমানের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলের ব্রাসেলস সফর এবং EU-এর আমন্ত্রণে তাদের বৈঠক প্রসঙ্গে মিলার বলেন, “জামায়াত আগ্রহ প্রকাশ করায় আমরা তাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছি। BNP, এনসিপি বা অন্য যে কোনো রাজনৈতিক দলের জন্যও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদরদপ্তরের দরজা খোলা রয়েছে। আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান এবং জনগণের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা জানতে আগ্রহী।”
নারী সংস্কার কমিশন নিয়ে বিতর্ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তবে হ্যাঁ, আমরা পুরুষ ও নারীর সমানাধিকারে বিশ্বাস করি এবং তা সারা বিশ্বে প্রচার করি। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা চাই বাংলাদেশের নারীদের অগ্রগতি ও উন্নয়ন দেখতে।”
অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন ডিক্যাব সভাপতি একেএম মঈনউদ্দিন এবং স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান মামুন।