এবার কুষ্টিয়ার মিরপুর পৌরসভায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত মো. আরিফুর রহমানকে মেয়র ঘোষণা করেছে আদালত। একইসঙ্গে ১০ দিনের মধ্যে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি)। নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করার চার বছর এক মাস পর তিনি মেয়র হিসেবে আদালতের রায় পেলেন।
রোববার (৪ মে) আরিফুর রহমান আদালতের রায়ের কপি ইসিতে জমা দেন। তিনি ২০২১ সালের ১৬ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান এবং এক সংবাদ সম্মেলনে পুরো নির্বাচন বাতিলের দাবি জানান। পরে তিনি নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন।
পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এনায়েতুল হক মোট ১০,৪২০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আরিফুর রহমান পান ২,৫৪৭ ভোট। বিএনপি মনোনীত প্রার্থী রহমত আলী পান ১,৭৩৬ ভোট।
২০২৫ সালের ২৭ এপ্রিল কুষ্টিয়া স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-৪ এর যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ মো. আলমগীর হোসেন আরিফুর রহমানকে মেয়র হিসেবে ঘোষণা করেন। রায়ে বলা হয়, স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) নির্বাচন বিধিমালা ২০১০-এর ৫৯(খ) ধারা অনুযায়ী রায় প্রদান করা হয়েছে।
রায়ে আরও বলা হয়, ২০২১ সালের ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ‘নৌকা’ প্রতীকের প্রার্থী মো. এনামুল হককে মেয়র হিসেবে ঘোষণাটি বাতিল করা হয়েছে। ‘মোবাইল’ প্রতীকের প্রার্থী আরিফুর রহমানকে ঐ নির্বাচনের বৈধ মেয়র হিসেবে ঘোষণা করা হয়। একইসঙ্গে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়কে ১০ দিনের মধ্যে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, “আমি এখনো রায়ের কপি পাইনি। কপি পাওয়ার পর কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
রোববার রাত ৮টার দিকে বাংলা ট্রিবিউনকে আরিফুর রহমান বলেন, “মিরপুর পৌরসভার নির্বাচনে আমার নিশ্চিত বিজয় ছিনিয়ে নিতে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালানো হয়। আমার মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও তার লোকজন এই হামলার সঙ্গে জড়িত। আমার ও আমার পরিবারের সদস্যদের নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়।”
ভোট কারচুপির মাধ্যমে পরাজিত হওয়ার পরই তিনি নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন বলে উল্লেখ করে আরিফুর রহমান আরও বলেন, “চার বছর এক মাস পরে আদালত আমার প্রতি সুবিচার করেছে। এটি সম্ভব হয়েছে জুলাই আন্দোলনের কারণে। আমি আশা করি নির্বাচন কমিশন আদালতের রায়কে সম্মান জানাবে এবং দ্রুত গেজেট প্রকাশ করে আমাকে মেয়রের দায়িত্ব পালনে সহযোগিতা করবে।”
এর আগে, ২০২০ সালের ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে আদালত। ২০২৫ সালের ২৭ মার্চ ঢাকা প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম এই রায় দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন ২৭ এপ্রিল ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে গেজেট প্রকাশ করে।
এছাড়াও, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ২০২১ সালের ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত নির্বাচনের রায়ে বিএনপি প্রার্থী শাহাদাত হোসেনকে বিজয়ী ঘোষণা করে আদালত। রায়ের সাত দিনের মাথায় নির্বাচন কমিশন গেজেট প্রকাশ করে তাঁকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।