সিরাজগঞ্জে ‘আয়না ঘর’, সুড়ঙ্গ বানিয়ে ৫ মাস পর বের হলেন বন্দিরা

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার চান্দাইকোনা ইউনিয়নের সোনারাম গ্রামে ‘আয়নার ঘর’ নামক এক ভয়ঙ্কর নির্যাতনকেন্দ্রের খোঁজ মিলেছে। পাঁচ মাস বন্দিত্বের পর এক বৃদ্ধ ও এক নারী সুড়ঙ্গ কেটে পালিয়ে আসেন সেই ঘর থেকে। ঘটনার পর এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

শুক্রবার (২ মে) রাতে গোপন সুড়ঙ্গ পথে পালিয়ে আসা ব্যক্তিরা হলেন— রায়গঞ্জ উপজেলার পূর্ব পাইকড়া গ্রামের মৃত রুস্তম আলীর ছেলে আব্দুল জব্বার (৭৫) এবং লক্ষ্মী বিষ্ণুপ্রসাদ গ্রামের মনসুর আলীর স্ত্রী শিল্পী খাতুন (৪৮)।

তারা জানান, এই ‘আয়নার ঘরে’ সাধারণ মানুষকে অপহরণ করে বন্দি করে নির্যাতন চালানো হতো। জোরপূর্বক জমির রেজিস্ট্রি, চাঁদা আদায়, এমনকি কিডনি বিক্রির মত ভয়ঙ্কর অপরাধও সংঘটিত হতো।

বন্দিত্ব থেকে মুক্তি পাওয়া শিল্পী খাতুন বলেন, “আমাকে এখানে পাঁচ মাস আটকে রাখা হয়েছিল। এর আগে এক মাস অন্য কোথাও ছিলাম, কিন্তু কোথায় রেখেছিল জানি না। মাঝে মাঝে আমাকে ইনজেকশন দেওয়া হতো।”

কে বা কারা তাকে বন্দি করেছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন— “গ্রামের ডাক্তার আরাফাত, শরীফ মেম্বার, কামরুল ইসলাম, হাফিজুল, পন্না এবং আরও তিনজন মুখে মাস্ক পরে থাকত। এছাড়াও আব্দুল জব্বার নামে একজন ঐ ঘরে বন্দি ছিল।”

অপর ভুক্তভোগী জব্বারের ছেলে শফিকুল ইসলাম জানান, “গত ১২ নভেম্বর বাবা নিখোঁজ হলে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করি। এরপর অনেক খোঁজ করেও কোনো সন্ধান মেলেনি। কিন্তু গতকাল গভীর রাতে সুড়ঙ্গ কেটে পালিয়ে এসে বাবা পরিবারের কাছে ফেরেন। বর্তমানে তিনি অসুস্থ অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি আছেন।”

রায়গঞ্জ থানা পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সন্দেহে একজনকে আটক করা হয়েছে। আটককৃত ব্যক্তি হলেন— রায়গঞ্জ উপজেলার পশ্চিম লক্ষ্মীকোলা গ্রামের রেজাউল করিম তালুকদারের ছেলে নাজমুল হোসেন আরাফাত (৪৫)। তিনি গ্রামীণ চিকিৎসক ও সাংবাদিক পরিচয়ে পরিচিত ছিলেন। ঘটনার পর রায়গঞ্জ প্রেস ক্লাব থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, ঘরটির মালিক জহুরুল ইসলামের ছেলে সুমন শেখ। সুমনের কাছ থেকে আরাফাত ভাড়া নিয়ে নিচতলায় তিন-চারটি ছোট ছোট কক্ষ তৈরি করেন। রাতে আরাফাত ও তার সঙ্গীরা সেখানে যাতায়াত করতেন।

ঘটনার পর ক্ষুব্ধ জনতা সুমন ও আরাফাতের বাড়িঘরে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে। পরে ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

এ বিষয়ে রায়গঞ্জ থানার ওসি আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, “ঘটনাস্থলে ব্যাপক জনসমাগম হয়েছে। এটি সত্যিকারের ‘আয়নার ঘর’ কি না তা যাচাই করা হচ্ছে। আরাফাত নামের একজনকে আটক করা হয়েছে। পুলিশের একাধিক দল ঘটনাস্থলে কাজ করছে।”

সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার ফারুক হোসেন জানান, “ঘটনাটি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

Scroll to Top