সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারওয়ার ও মেহরুন রুনির মৃত্যু আত্মহত্যা নয়, এটি ছিল নির্মম হত্যাকাণ্ড। এই চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডে দু’জন ব্যক্তি অংশগ্রহণ করে। প্রথমে সাগর ও পরে ছুরিকাঘাত করা হয় রুনিকে। হত্যার আগে সন্তান মেঘকে নিয়ে একই খাটে শুয়ে ছিলেন তারা। তবে ডিএনএ (ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক এসিড) অস্পষ্টতায় হত্যাকারীদের শনাক্ত করা যাচ্ছে না। তদন্তের জন্য আরও সময় লাগবে উল্লেখ করে সম্প্রতি হাইকোর্টে অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে আলোচিত এ মামলাটির তদন্তে গঠিত টাস্কফোর্স।
টাস্কফোর্সের প্রধান ও পিবিআই প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. মোস্তফা কামাল শনিবার (৩ মে) রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘হাইকোর্ট আমাদের কাছে জানতে চেয়েছে কি কি কাজ করা হয়েছে। সেগুলোই হাইকোর্টকে জানানো হয়েছে।’
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তদন্তে দাম্পত্য কলহ, চুরি বা পেশাগত শত্রুতার কোনো প্রমাণ মেলেনি। ময়নাতদন্তে অচেতন বা বিষাক্ত কিছু পাওয়া যায়নি। রান্না ঘরে থাকা ছুরি ও বটি দিয়ে হত্যা করা হয় তাদের। ক্ষত নিয়েও অনেকক্ষণ জীবিত ছিলেন তারা। আগে থেকে বাসায় কেউ ছিল না, আর জোর করে কেউ প্রবেশ করেনি। গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে র্যাবের কাছ থেকে সাগর-রুনি হত্যার তদন্তের দায়িত্ব সরিয়ে বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অভিজ্ঞ কর্মীদের সমন্বয়ে গঠিত একটি নতুন টাস্কফোর্সের কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দেন। র্যাব ২০১২ সালে মামলাটির দায়িত্ব নেওয়ার পর বছরের পর বছর ধরে তদন্তে অগ্রগতি না হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট থেকে এমন নির্দেশ দেয়।
এর পর নবগঠিত টাস্কফোর্সকে চলতি বছরের ৩১ মার্চের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিলেও এখনো তদন্ত শেষ করতে পারেনি তারা। এখন পর্যন্ত নতুন করে ৭ সাংবাদিকসহ ১২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে টাস্কফোর্স।
সাম্প্রতিক অগ্রগতি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডটি রাত ৩টা থেকে ৫টার মধ্যে সংঘটিত হয়েছে। ডিএনএ বিশ্লেষণের ভিত্তিতে বলা হয়েছে, প্রথমে সাগরকে, পরে রুনিকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার আগে সন্তান মেঘকে নিয়ে একই খাটে শুয়ে ছিলেন তারা।
প্রতিবেদন আরও জানায়, সাগরের হাত-পা বেঁধে রাখা হয়েছিল এই আশঙ্কায় যে তিনি হত্যাকে প্রতিরোধ করতে পারেন। তবে রুনি শারীরিকভাবে দুর্বল হওয়ায় তার হাত-পা বাঁধার প্রয়োজন হয়নি। ‘ব্লাড প্যাটার্ন’ পর্যবেক্ষণ করে ধারণা করা হয়, আগে মারা গেছেন রুনি। আর বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ করে সমীকরণ মিলিয়ে টাস্কফোর্স বলছে, সাগরের মৃত্যু হয়েছে পরে।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, সেদিন (হত্যাকাণ্ডের পরদিন সকালে) বেলা ১০টা ৩০ থেকে ১১টার মধ্যে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তার আগেই সাংবাদিক ও স্থানীয়দের পদচারণায় গুরুত্বপূর্ণ আলামত নষ্ট হয়ে যায়। রান্নাঘরের ব্যালকনির ১৪.৫ ইঞ্চি বাই ৮.৫ ইঞ্চির ভাঙা অংশটি একেবারেই নতুন ছিল এবং এর মধ্য দিয়ে সহজেই কেউ ঢুকতে বা বের হতে পারত। যদিও সেখানকার পূর্ণাঙ্গ ফুটপ্রিন্ট পাওয়া যায়নি।
এদিকে, সিআইডির সঙ্গে ডিএনএ বিশ্লেষণে টাস্কফোর্স জানায়, যদি ২-৩ জনের ডিএনএ একসাথে থাকে তবে তা শনাক্ত করা সম্ভব। কিন্তু এর চেয়ে বেশি হলে শনাক্ত করা কঠিন। সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের নমুনায় ৫-৬ জনের ডিএনএ থাকায় কাউকে নির্দিষ্টভাবে শনাক্ত করা যায়নি।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে ভাড়া বাসায় নির্মমভাবে খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর ও রুনি। সে সময় সাগর মাছরাঙা টেলিভিশনে এবং রুনি এটিএন বাংলায় কর্মরত ছিলেন। আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের পর রুনির ভাই নওশের আলম শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা করেন।