বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সোমবার বিমানের একটি ফ্লাইটে লন্ডন থেকে দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
ওই ফ্লাইটে দায়িত্ব পালনের কথা থাকলেও মধ্যরাতে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে দুই কেবিন ক্রুকে। তারা হলেন–আল কুবরুন নাহার কসমিক ও মো. কামরুল ইসলাম বিপোন।
বিমান সূত্রে জানা গেছে, নিরাপত্তা উদ্বেগ ও রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার অভিযোগের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট বিজি ২০২ রোববার সন্ধ্যায় লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করবে। এই ফ্লাইটেই থাকবেন খালেদা জিয়া, তাঁর পরিবারের সদস্য এবং শীর্ষস্থানীয় বিএনপি নেতারা।
আগাম প্রস্তুতি হিসেবে শুক্রবার দুপুরে ওই ফ্লাইটে চিফ পার্সার নিশি, ফ্লাইট পার্সার আল কুবরুন নাহার কসমিক, ফ্লাইট পার্সার মো. কামরুল ইসলাম বিপোন এবং জুনিয়র পার্সার রিফাজের নাম চূড়ান্ত করে বিমানের ফ্লাইট সার্ভিস বিভাগের সংশ্লিষ্ট ইউনিট। তবে গোয়েন্দা তথ্যে তাদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা এবং ভিআইপি যাত্রীর নিরাপত্তার সম্ভাব্য ঝুঁকির কথা উঠে আসায় শুক্রবার মধ্যরাতে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে দুজনের নাম বাতিল করা হয়।
ফ্লাইট সার্ভিস বিভাগ তাঁদের নাম অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে এবং পরবর্তীতে তাঁদের সরিয়ে দেওয়ার বিষয়টিও জানিয়েছে। বিভাগটি জানায়, শেষ মুহূর্তে কসমিক ও বিপনের পরিবর্তে ফ্লাইট পার্সার ডিউক এবং ফ্লাইট স্টুয়ার্ডেস আনারা মারজানকে পাঠানো হয়েছে।
বিমান বাংলাদেশ সূত্র জানায়, গোয়েন্দা তথ্যে উঠে এসেছে আল কুবরুন নাহার কসমিক নিয়মিত ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার ফ্লাইট পরিচালনা করতেন। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের নেতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বজায় রেখে সরকারি সুবিধা ভোগের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। চাকরি জীবনে তিনি ১৮ বার কারণ দর্শানোর নোটিশ পেয়েছেন। শাস্তি হিসেবে একাধিকবার গ্রাউন্ডেড হয়েছেন।
অন্যদিকে, জুনিয়র পার্সার কামরুল ইসলাম বিপনের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে সরকার দলীয় বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। তিনি প্রতিবছর ১৫ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ফুল দেয়া, শেখ কামালের জন্মদিনে প্রীতি ফুটবল ম্যাচের আয়োজন এবং বিমানে শেখ রাসেল দিবস উদযাপনের অন্যতম উদ্যোক্তা বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) বসরা ইসলাম বলেন, “তাঁদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে—এমন কোনো তথ্য আমার কাছে নেই। বিমানের সংশ্লিষ্ট বিভাগ বিভিন্ন কারণে কাউকে ডিউটিতে না রাখতে পারে, অথবা রিস্কেডিউল হতে পারে। এটা খুব স্বাভাবিক ঘটনা।”
২০১৮ সালে দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার হন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি দুই বছরের বেশি সময় কারাগারে ছিলেন। তার পরিবার ও দল একাধিকবার আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে বিদেশে চিকিৎসার জন্য অনুমতি চাইলেও সাড়া মেলেনি।
২০২৫ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর রাষ্ট্রপতির আদেশে খালেদা জিয়া মুক্তি পান। এরপর আদালত তাঁর বিরুদ্ধে থাকা দুইটি দুর্নীতি মামলার রায় বাতিল করে দেয়।