পঞ্চপাণ্ডবে ধ্বংস বিদ্যুৎ খাত

বিদ্যুৎ খাতে এরা পরিচিত ছিল ‘পঞ্চপাণ্ডব’ নামে। এই পাঁচজন ছিলেন বিদ্যুৎ খাতের আর্থিক লেনদেনের মূল নিয়ন্ত্রক। প্রকল্প অনুমোদন, নিয়োগ কিংবা যেকোনো আর্থিক লেনদেন—সবকিছুতেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতেন তারা। দেশের বিদ্যুৎ খাত চলত মূলত তাদের হাত ধরেই।

তারা বিপুল পরিমাণ অর্থ লুট করেছে। এই পঞ্চপাণ্ডবদের ছিল তিনজন গডফাদার। তারা গডফাদারদের কমিশন দেওয়ায়, তাদের কোনো জবাবদিহি করতে হয়নি। সংক্ষেপে, তারা ছিলেন জবাবদিহির ঊর্ধ্বে।

এই বিদ্যুৎ খাতের পঞ্চপাণ্ডব হলেন: সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, সাবেক মুখ্য সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক এসডিজি কোঅর্ডিনেটর ও মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, সামিট গ্রুপের আজিজ খান এবং এস আলম। এ পাঁচজনই বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাত ধ্বংসের প্রধান কারিগর। বিদ্যুৎ খাতে নেওয়া প্রতিটি উদ্যোগই তাদের লুটপাট নীতিকে সামনে রেখেই পরিচালিত হয়েছে। যেখানে তারা সুযোগ পেয়েছে, সেখানেই তারা বিদ্যুৎ খেয়ে নিয়েছে।

বিদ্যুৎ খাতে স্বয়ংসম্পূর্ণতার ঢোল পিটিয়ে, তারা আসলে বিদ্যুৎ খাতের বারোটা বাজিয়েছে। তদন্তে উঠে এসেছে, পতিত স্বৈরাচারী সরকার পঞ্চপাণ্ডবদের তিনজন গডফাদারকে কমিশন দিয়ে নির্দ্বিধায় বিদ্যুৎ খাত লুট করেছে। এই তিনজন গডফাদার হলেন: সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা, শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং শেখ রেহানার ছেলে রেদোয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি। তারা সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ছায়াতলে থেকে এই দুর্নীতিকে আড়াল করেছে। বিদ্যুৎ খাত লুটের এই চিত্র ভয়ঙ্কর ও ধ্বংসাত্মক।

এখনো পর্যন্ত এর পুরো ইতিহাস উদ্ধার করা যায়নি। তবে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে, তা শুধু দেশের স্বার্থের পরিপন্থীই নয়, আতঙ্ক ছড়ানোর মতো। সূত্র জানায়, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে প্রথম লুট হয়েছে ‘কুইক রেন্টাল’–এর মাধ্যমে। দ্বিতীয়ত, ভারতের ওপর নির্ভরতা, তৃতীয়ত, উৎপাদন ও বিতরণ, চতুর্থত, রূপপুর কেলেঙ্কারি এবং পঞ্চমত, এলএনজি দুর্নীতি।

দুর্নীতি-১: কুইক রেন্টাল:
প্রায় ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে বেসরকারি খাতে কোনো টেন্ডার ছাড়াই ১০০টিরও বেশি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এর অধিকাংশই কোনো কাজে আসেনি। সরকার দাবি করলেও যে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৫,০০০ মেগাওয়াট, বাস্তবে লোডশেডিং থেকে মুক্তি মেলেনি। এমনকি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কাছেও দেশের প্রকৃত চাহিদার কোনো হিসাব ছিল না।

উপলব্ধ তথ্য অনুযায়ী, আওয়ামী লীগের তিন মেয়াদে বিদ্যুৎ খাতে ব্যয় হয়েছে ২৮.৩ বিলিয়ন ডলার, যা বর্তমান (প্রতি ডলার ১২১ টাকা ধরে) টাকায় দাঁড়ায় প্রায় ৩৪২,৪৩০ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু ক্যাপাসিটি চার্জের নামে লুট হয়েছে এক লাখ কোটি টাকা।

বিদ্যুৎ না তৈরি করেও ক্যাপাসিটি দেখিয়ে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বিশাল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের বেশিরভাগই আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ কিংবা তাদের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের মালিকানাধীন। এই ‘ক্যাপাসিটি চার্জ’ লুটপাটের আবিষ্কারক ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন আমলা আবুল কালাম আজাদ। কুইক রেন্টালের অর্থই হলো ‘দ্রুত টাকা’। এই আবিষ্কারের মাধ্যমে তিনি শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। পরে তাকে বিদ্যুৎ সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তার উৎসাহে ‘দায়মুক্তি আইন’ প্রণয়ন করা হয়—যার ফলে কোনো লুটপাটের বিচার করা যেত না।

জানা গেছে, কমিশন দিলেই কুইক রেন্টাল পাওয়া যেত। আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতাদের অনুগত ব্যবসায়ীরা এবং ছোট নেতারাও কুইক রেন্টালের লাইসেন্স পেয়েছেন। এমনকি আসবাব তৈরির প্রতিষ্ঠান ‘আতবি’র মতো কোম্পানিও বিদ্যুৎ উৎপাদনের অনুমতি পেয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতারা যেমন—জাহাঙ্গীর কবির নানক, মির্জা আজম, ওমর ফারুক চৌধুরী, আলাউদ্দিন নাসিম চৌধুরী, প্রয়াত আসলামুল হক ও আরও ৬৩ জন কর্মী কুইক রেন্টালের অনুমতি পেয়েছেন।

এই অনুমতি পাওয়ার পর তারা কাগজ বিক্রি করেছেন কোটি কোটি টাকায়। প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্র অন্তত চারবার মালিকানা পরিবর্তন করেছে। একই বিদ্যুৎকেন্দ্র একাধিকবার বিক্রি হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের লাইসেন্স ৫ কোটি টাকায় আসলাম হকের কাছে বিক্রি করা হয়। পরে আসলাম হক সেটি ‘সিকদার গ্রুপ’-এর কাছে বিক্রি করেন।

নসরুল হামিদ বিপুর ছোট ভাই ইনতেখাবুল হামিদ অপু দুইটি বিদ্যুৎকেন্দ্র পেয়েছেন। এছাড়াও সাবেক শরীয়তপুর এমপি নাহিম রাজ্জাক, সাবেক বিসিবি পরিচালক জালাল ইউনুস, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের ভাই আবদুস সালাম, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, সাবেক টাঙ্গাইল এমপি তানভীর হাসান (ছোট মনির), সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুর রহমান, সিলেটের হাবিবুর রহমান এমপি এবং রাজশাহী অঞ্চলের এমপি এনামুল হক প্রত্যেকেই একটি করে বিদ্যুৎকেন্দ্র পেয়েছেন।

এইভাবে আইনের মাধ্যমে কুইক রেন্টালের নামে স্থায়ী লুটপাটের ব্যবস্থা করা হয়। বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু থাকুক বা না থাকুক, সরকারকে নিয়মিত ‘ক্যাপাসিটি চার্জ’ দিতে হয়। এই লুটের টাকা তিনভাগে ভাগ হয়েছে—এক অংশ গেছে তিন গডফাদারের কাছে, এরপর পঞ্চপাণ্ডব ও বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকদের।

এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, “গত ১৫ বছরে বিদ্যুৎ খাতে সবচেয়ে বড় দুর্নীতি হয়েছে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে। বিশেষ আইনের কারণে কোনো উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা ছিল না।”

সংশ্লিষ্ট সূত্র অনুযায়ী, ২০০৮-০৯ অর্থবছর থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত রেন্টাল, কুইক রেন্টাল ও আইপিপি (ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার) কেন্দ্রগুলোকে ৮৯,৭৪০ কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হয়েছে। গত জুলাই মাসে মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন ডিপার্টমেন্ট (IMED)-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ১৪ বছরে এসব কেন্দ্রকে প্রায় ৯০,০০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। পিডিবি কর্মকর্তারা জানান, ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরের হিসাব যোগ করলে এই অঙ্ক ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

তথ্য অনুযায়ী, ওই সময়ে পাঁচ পাণ্ডবদের একজন সামিট গ্রুপকে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ প্রায় ১০,৬২৩ কোটি টাকা দেওয়া হয়, যা মোট ব্যয়ের প্রায় ১২ শতাংশ। সামিট গ্রুপের মূল পৃষ্ঠপোষক ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। জয়-এর কারণে সামিট গ্রুপ বিদ্যুৎ খাতে ‘ডন’ হয়ে ওঠে। দ্বিতীয় স্থানে ছিল যুক্তরাজ্যভিত্তিক কোম্পানি অ্যাগ্রিকো ইন্টারন্যাশনাল, যাদের দেওয়া হয় ৭,৯৩২ কোটি টাকা। অ্যাগ্রিকো বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে লুটপাট করেছে প্রধানত রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির পৃষ্ঠপোষকতায়। অ্যাগ্রিকোর লুটের অর্থের বড় অংশ ববি পেয়েছেন। বাংলাদেশে অ্যাগ্রিকোর ছায়া এজেন্ট ছিলেন এস আলম।

চীনের কোম্পানি Erda Power Holdings তৃতীয় স্থানে রয়েছে ৭,৫২৩ কোটি টাকার লেনদেন নিয়ে। বাংলাদেশে এ প্রতিষ্ঠানের অঘোষিত এজেন্ট ছিলেন আবুল কালাম আজাদ। চতুর্থ স্থানে থাকা ইউনাইটেড গ্রুপ পেয়েছে ৬,৫৭৫ কোটি টাকা। পঞ্চম স্থানে থাকা রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (RPCL) পেয়েছে ৫,১১৭ কোটি টাকা। ক্যাপাসিটি চার্জের নামে ব্যাংলা ক্যাট গ্রুপ পেয়েছে ৫,৬৭০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ-চীন যৌথ উদ্যোগে গঠিত পায়রা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, যেটি মাত্র তিন বছর আগে উৎপাদন শুরু করেছে, পেয়েছে ৪,৫৫০ কোটি টাকা। আরেকটি গ্রুপ পেয়েছে ৪,৫২৫ কোটি টাকা এবং খুলনা পাওয়ার কোম্পানি (KPCL) পেয়েছে ৪,৫৪০ কোটি টাকা। এই কোম্পানির ৩৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সামিটের, ৩৫ শতাংশ ইউনাইটেড গ্রুপের এবং বাকি ৩০ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে। ফলে খুলনা পাওয়ারের ক্যাপাসিটি চার্জের বড় অংশ চলে গেছে সামিট ও ইউনাইটেড গ্রুপের পকেটে।

দুর্নীতি-২: বিদ্যুৎ খাতে ভারতের উপর নির্ভরশীলতা:
গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিদ্যুৎ খাতে আত্মনির্ভরশীলতার পরিবর্তে ভারতের উপর নির্ভরশীলতা ছিল স্পষ্ট। আদানি ও রিলায়েন্সের কাছ থেকে বিদ্যুৎ আমদানির মূল কারণ ছিল তিন গডফাদারের কমিশন। এবং এই কমিশন পেতেন শেখ রেহানা।

তথ্য অনুযায়ী, ৯ বছরে ভারতে থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য প্রায় ১১,১৫০ কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয়েছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ প্রথম ভারতের কাছ থেকে বিদ্যুৎ আমদানি শুরু করে। ওই বছর ক্যাপাসিটি চার্জ ছিল প্রায় ৫০১ কোটি টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে আমদানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্যাপাসিটি চার্জ বেড়ে দাঁড়ায় ৯২২ কোটি টাকা।

২০১৬-১৭ অর্থবছরে ক্যাপাসিটি চার্জ হয় ১,৬৮০ কোটি টাকা, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১,৭৮০ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আমদানি আরও বাড়ায় ক্যাপাসিটি চার্জ হয় ৫৫৩ কোটি টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এই চার্জ দাঁড়ায় ১,৪৯৩ কোটি টাকা, ২০২০-২১ অর্থবছরে ১,৮০৫ কোটি টাকা এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ১,৭২৪ কোটি টাকা।

২০২১-২২, ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মোট আমদানির বিপরীতে প্রায় ৪,০০০ কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয়েছে।

দুর্নীতি-৩: উৎপাদন ও বিতরণে লুটপাট
বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে বিতরণ ও সঞ্চালন লাইন তৈরির জন্য। সারাদেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নের লক্ষ্যে মিটার কেনা হয়েছে, সুবিধা সম্প্রসারিত হয়েছে। আবার দেশের বিভিন্ন গ্যাসক্ষেত্রে কূপ খননের নামে বাড়তি টাকায় প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, যার যথাযথ তথ্যপ্রমাণ নেই।

২০টি কূপ খননের দায়িত্ব দেওয়া হয় রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি গ্যাজপ্রম-কে, যেখানে প্রতিটি কূপে ব্যয় হয়েছে ২০ মিলিয়ন ডলারের বেশি। অথচ বাপেক্স নিজেই এই কাজ ১০ মিলিয়ন ডলারে করতে পারত। সরকারের নির্দেশে প্রস্তুতকৃত একটি সাদা বইয়ে উল্লেখ আছে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অনেক সময় নিয়মিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই অশুভ আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, একই গ্রুপের বিভিন্ন কোম্পানির মধ্যে কৃত্রিম প্রতিযোগিতার নামে টেন্ডার ডাকা হয়েছে এবং কাজ দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ঘনিষ্ঠদের সাব-কন্ট্রাক্ট দিয়ে লাভবান করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি অর্থ লুট করেছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানির প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। এই লুটের অর্থের একটি অংশ ববির CRI পরিচালনায় ব্যবহার হয়েছে।

দুর্নীতি-৪: রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প কেলেঙ্কারি
গ্লোবাল ডিফেন্স কর্পোরেশনের ১৭ আগস্ট প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে যে, বাংলাদেশের বহিষ্কৃত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। এতে সহায়তা করেছেন তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিক।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাশিয়ার রোসাটম-এর মাধ্যমে পুরনো সোভিয়েত যুগের পারমাণবিক চুল্লি কেনার নামে এই টাকা আত্মসাৎ করা হয়। প্রকল্পের মোট ব্যয় ছিল ১২.৬৫ বিলিয়ন ডলার, যেখানে প্রকৃত খরচের তুলনায় তা ছিল বহুগুণ বেশি। রোসাটম শেখ হাসিনাকে মালয়েশিয়ান ব্যাংকে রাখা স্লাশ ফান্ডের মাধ্যমে ৫ বিলিয়ন ডলার সরানোর সুযোগ করে দেয়।

টাকা পাচারের এই চুক্তিতে মধ্যস্থতাকারী ছিলেন টিউলিপ সিদ্দিক এবং এই অর্থের ৩০% পেয়েছেন টিউলিপ, শেখ রেহানা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। ২০১৩ সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এর সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠকে টিউলিপ ছিলেন সঙ্গী এবং মধ্যস্থতাকারী।

২০০৯ সালে টিউলিপ, তার মা শেখ রেহানা এবং মামা তারিক আহমেদ সিদ্দিক (তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা) ‘প্রচ্ছায়া লিমিটেড’ নামে একটি ভুয়া কোম্পানি চালু করেন এবং আমেরিকায় জুমানা ইনভেস্টমেন্ট নামেও একটি প্রতিষ্ঠান আছে।

গ্লোবাল ডিফেন্স কর্পোরেশন জানায়, এই কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে অর্থ পাচার করা হয়েছে যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে। এই কোম্পানিগুলোর সঙ্গে ডেসটিনি গ্রুপ-এর প্রতারণামূলক তহবিলের সংযোগ রয়েছে এবং প্রায় ৯০০ মিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে।

দুর্নীতি-৫: এলএনজি (LNG) কেলেঙ্কারি
যদিও সরকার দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস সংযোগ বন্ধ রেখেছে, তথাকথিত ‘বিশেষ বিবেচনায়’ কিছু শিল্পপ্রতিষ্ঠান গ্যাস সংযোগ পেয়েছে। এ বিষয়ে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের কমিটির প্রধান ছিলেন সাবেক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী। অভিযোগ রয়েছে, এই কমিটি ঘুষ গ্রহণ করে গ্যাস সংযোগ দিয়েছে।

জ্বালানি খাতে তৎকালীন উপদেষ্টা ও প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু-এর মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল, যা ‘ওপেন সিক্রেট’ হিসেবে পরিচিত।

বিপুর ছোট ভাই ইন্তেখাবুল হামিদ অপু, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ভাতিজা এবং কেরানীগঞ্জের সাহিন চেয়ারম্যান মিলে একটি সিন্ডিকেট গঠন করে। তারা দেশি-বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে মিলে ডিপিডিসি, পিডিবি, ডেসকো, আরইবি ও নেসকো-র আধুনিক মিটারিং, মিটার ইনস্টলেশন, বিলিং ও নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি প্রকল্পের কাজ নেয় — যার বাজেট প্রায় ৬,০০০ কোটি টাকা।

একইভাবে, Powerco International নামের একটি কোম্পানি বিদেশি দুই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে একটি এলপিজি প্রকল্পের কাজ পায়, যা বাস্তবে আলোর মুখ দেখেনি। অভিযোগ রয়েছে, পাওয়ারকোর প্রধান শেয়ারহোল্ডার কমরুজ্জামান চৌধুরী বিপুর মামার আত্মীয়।

Scroll to Top