বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো, ভারতের চাপিয়ে দেওয়া ১০টি বড় প্রকল্প বাতিল করেছে ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। একটি সাহসী ও যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে এটি। দীর্ঘদিন ধরে ভারত একতরফাভাবে বাংলাদেশের কৌশলগত ও অর্থনৈতিক স্বার্থকে উপেক্ষা করে নিজের স্বার্থে বিভিন্ন চুক্তি ও প্রকল্প চাপিয়ে দিয়ে আসছিল। এবার সেই ধারা ভেঙে দিয়েছে নতুন নেতৃত্ব।
এই প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে মূলত ভারতই বেশি উপকৃত হতো, আর বাংলাদেশ পড়তো কৌশলগত ঝুঁকির মুখে। উদাহরণস্বরূপ, ত্রিপুরা-চট্টগ্রাম রেল সংযোগ প্রকল্পে ভারত ফ্রি ট্রানজিট সুবিধা পেত, কিন্তু বাংলাদেশ পেত না তেমন কোনো কৌশলগত সুবিধা—বরং জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতো এটি। একইভাবে, অভয়পুর-আখাউড়া রেল প্রকল্পে ভারতীয় সামরিক ও বাণিজ্যিক পণ্য পরিবহনের সুবিধা থাকলেও, বাংলাদেশের জন্য কোনো কার্যকর লাভ ছিল না। আশুগঞ্জ-আগরতলা করিডোর, ফেনী নদীর পানিব্যবস্থাপনা, কুশিয়ারা নদীর পানিবণ্টন, সড়ক ও নৌপথ উন্নয়ন প্রকল্প এবং ফারাক্কা সংস্কারসহ মোট ১০টি প্রকল্প ছিল ভারতের স্বার্থে পরিচালিত।
সবচেয়ে আলোচিত ছিল চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের চুক্তি। ভারতের উদ্দেশ্য ছিল এই দুটি কৌশলগত বন্দরকে একচেটিয়া ব্যবহার নিশ্চিত করা, যা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারত। সরকার এই প্রকল্প বাতিল করে জানিয়ে দেয়, কোনো দেশের জন্য বাংলাদেশের কৌশলগত স্থাপনা একচেটিয়া ব্যবহারের অধিকার দেওয়া হবে না।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সুপারিশে সিলেট-শিবচর সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পও বাতিল করা হয়েছে, যা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সরাসরি প্রবেশের পথ তৈরি করতো। একইভাবে, ত্রিপুরা থেকে বাংলাদেশের জ্বালানি বাজারে প্রবেশের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে থাকা পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন সম্প্রসারণ প্রকল্পও স্থগিত করা হয়েছে। এসব প্রকল্প বাতিলের পর ভারতীয় কূটনৈতিক মহল ও মিডিয়ায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ভারতীয় মিডিয়ায় বাংলাদেশবিরোধী প্রচার শুরু হয়। তবে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার স্পষ্ট জানিয়ে দেয়—বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে না।
এই সাহসী সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশ তার কৌশলগত স্বাধীনতা ও জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় এক নতুন মাইলফলক স্থাপন করেছে। ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের এই পদক্ষেপকে অনেকেই বলছেন, “স্বাধীনতার পর সবচেয়ে শক্ত অবস্থান”।