সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলায় ‘ডেভিল হান্ট’-এ গ্রেপ্তারের মাত্র ছয় ঘণ্টা পরই আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড সাধারণ সম্পাদক দুলা মিয়াকে থানা থেকে ছেড়ে দিয়েছেন ধর্মপাশা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ এনামুল হক। বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয় এবং ১৭ বছর ধরে দমন-পীড়ন সহ্য করা বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
গত মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে উপজেলার পাইকুরাটি ইউনিয়নের বাদশাগঞ্জ বাজারে হানিফের চা দোকানের পেছন থেকে দুলা মিয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে রাত ২টার দিকে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয় বিএনপি নেতারা ও এলাকাবাসীরা জানান, যাকে গ্রেপ্তার ও মুক্তি দেওয়া হয়েছে তিনি হলেন সেলবরষ ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দুলা মিয়া। তার বড় ভাই সোনা মিয়া সেলবরষ ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি।
জানা যায়, ২০২২ সালে দুলা মিয়া তার ফেসবুক আইডিতে একটি পোস্টার শেয়ার করেন, যেখানে তাকে সেলবরষ ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দেওয়া হয়। সেই পোস্টারের ভিত্তিতেই তাকে ‘শয়তান ধরো’ অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়।
পরে তার ভাই বিএনপি নেতা তাহের উদ্দিন সোনা মিয়া থানায় ছুটে যান তাকে মুক্ত করার জন্য। পরে ওসি এনামুল হক তার জিম্মায় দুলা মিয়াকে ছেড়ে দেন।
এ প্রসঙ্গে দুলা মিয়া বলেন, “পোস্টারটা আমার মেয়ের জামাই দিয়েছে। আমার নাম প্রস্তাবিত কমিটিতে ছিল, কিন্তু সেই কমিটি অনুমোদিত নয়, সুতরাং তার কোনো গুরুত্ব নেই।”
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতা জানান, দুলা মিয়া সাবেক এমপি ময়েজ্জেম হোসেন রতনের ঘনিষ্ঠ ক্যাডার হিসেবে পরিচিত। তিনি আওয়ামী লীগের দুঃশাসনকালে সাধারণ মানুষের ওপর নানা অন্যায়-অবিচার করেছেন।
তারা বলেন, “আমরা বুঝতে পারছি না, তাকে গ্রেপ্তার করার পর আবার কেন ছেড়ে দেওয়া হলো। এতে বিএনপির মনোবলে ধাক্কা লেগেছে, একইসঙ্গে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।”
এ বিষয়ে দুলা মিয়ার ভাই বিএনপি নেতা সোনা মিয়া বলেন, “ওসি সাহেব বলেছেন, দুলা মিয়া থানায় অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। পরে আমার জিম্মায় তাকে ছেড়ে দেন।”
ধর্মপাশা থানার ওসি মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, “আমরা কোনো কাগজপত্র পাইনি যে দুলা মিয়ার নাম কমিটিতে আছে। সে অসুস্থ হওয়ায় বড় ভাইয়ের জিম্মায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।”
এ বিষয়ে ধর্মপাশা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আলী ফরিদ আহমেদ বলেন, “লোকজন বলেছিল দুলা মিয়া যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের বড় নেতা। পরে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, তার নাম কোনো কমিটিতে নেই এবং সে হৃদরোগে আক্রান্ত।”