বাংলাদেশ কি একটি নতুন শিল্প বিপ্লবের দোরগোড়ায়? এমন সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। আজ সকালে (১ মে, ২০২৫) দেওয়া এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে শফিকুল জানান, তিনি পিআরএএন-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সিইও আহসান খান চৌধুরীর সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন। সম্প্রতি তাইওয়ান সফর শেষে দেশে ফিরে আহসান খান জানান, পিআরএএন এখন একাধিক চীনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা করছে।
বিশ্ব বাণিজ্যের চেহারা দ্রুত বদলাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নীতির কারণে উৎপাদন এখন পূর্ব এশিয়া থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় স্থানান্তরিত হচ্ছে। বাংলাদেশও সেই পরিবর্তনের কেন্দ্রে উঠে আসার সুযোগ পেয়েছে। পিআরএএন আর নতুন জমিতে কারখানা গড়ছে না। তারা পুরনো এবং অচল সরকারি ও বেসরকারি কারখানাগুলোকে রূপান্তর করছে আধুনিক রপ্তানিমুখী প্ল্যান্টে। রংপুরের পুরনো তামাক কারখানাটি এখন একটি জুতা তৈরির কারখানা, আর রাজশাহীর পুরনো পাটকলটি রূপান্তরিত হয়েছে রপ্তানিমুখী ইউনিটে।
এ ধরনের উদ্যোগ এখন দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ছে। আহসান খান বলেন, “বিশ্ব বাজারে পরিবর্তনের সুযোগ বিশাল। আমাদের শুধু একটি সহায়ক পরিবেশ প্রয়োজন যেখানে উৎপাদন এবং রপ্তানি নির্বিঘ্নে চালানো সম্ভব।”
শফিকুল আলম লেখেন, এখন নিউইয়র্ক টাইমস, ফিনান্সিয়াল টাইমস বা ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের মতো পত্রিকাগুলো দেখলেই বোঝা যায়, ব্রেটন উডস বা ডব্লিউটিও ভিত্তিক পুরনো বাণিজ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে। এই ব্যবস্থায় চীন, ভিয়েতনাম, কোরিয়া, সিঙ্গাপুর রপ্তানির মাধ্যমে ধনী হয়েছে। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়া পিছিয়ে ছিল। এখন নতুন একটি সুযোগ এসেছে। বাংলাদেশ এই সুযোগ নিতে পারবে কি না, সেটিই বড় প্রশ্ন।
এখানে রাজনীতি বড় ভূমিকা রাখবে। ইতিবাচক দিক হলো, এখন দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দলই ব্যবসাবান্ধব মনোভাব দেখাচ্ছে। তবে শফিকুল আলম মনে করেন, বড় চ্যালেঞ্জ হবে পণ্যের পরিবহন ও সরবরাহ ব্যবস্থায়। যদি আমরা দ্রুত রপ্তানি না করতে পারি, তাহলে এই সম্ভাবনাও ম্লান হয়ে যেতে পারে।
চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে বড় পরিকল্পনা
সরকার বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা ছয় গুণ বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। এতে বছরে ৭.৮৬ মিলিয়ন কনটেইনার হ্যান্ডল করা সম্ভব হবে। এই প্রকল্পে একটি আন্তর্জাতিক কোম্পানিকে যুক্ত করার পরিকল্পনাও রয়েছে। এটি সফল হলে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশ্বে এটি একটি স্পষ্ট বার্তা দেবে যে, বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত এবং উন্মুক্ত।
পরবর্তী ছয় থেকে সাত মাস হবে মোড় ঘোরানো সময়
শফিকুল আলম লেখেন, এই ছয় থেকে সাত মাস নির্ধারণ করবে বাংলাদেশ কি সত্যি নিজেকে একটি রপ্তানিমুখী শিল্প শক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে পারবে কি না। আমাদের সামনে একটি বড় সুযোগ এসেছে। এখন প্রশ্ন, আমরা তা কাজে লাগাতে পারব কি না?